BD SYLHET NEWS
সিলেটরবিবার, ২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৮:২৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

হবিগঞ্জে ‘পলো বাওয়া’ উৎসবের কাছে হার মানলো শীত


জানুয়ারি ২৯, ২০২৫ ৬:০৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিডিসিলেট ডেস্ক : বাঁশ দিয়ে তৈরি মাছ শিকারের এক ধরনের ফাঁদের নাম পলো। এক সময় পলো দিয়ে মাছ শিকার করা জনপ্রিয় ছিল গ্রামীণ সমাজে। বিশেষ করে পৌষ-মাঘ মাসে বিল বা উন্মোক্ত হাওরে দল বেঁধে মাছ শিকার করা হতো। যাকে বলা হয় ‘পলোবাইচ’ বা ‘পলো বাওয়া’ উৎসব। জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় এবং কালের পরিক্রমায় এখন সেই ‘পলোবাইচ’ হারিয়ে গেছে।

তবে এখনো হারানো সেই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছেন হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের আতুকুড়া গ্রামবাসী। এরই ধারাবাহিকতায় শীতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত বড়আন বিলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘পলো বাওয়া’ উৎসব। যা বিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেছেন শত শত গ্রামবাসী। ‘পলো বাওয়া’ উৎসবে শুধু আতুকুড়া গ্রামবাসীই নন, মাছ শিকার করতে ভোর থেকেই বিলের পাড়ে জড়ো হতে থাকেন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শৌখিন মাছ শিকারিরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত উপেক্ষা করে ভোরের আলোর সঙ্গে সঙ্গে বড়আন বিলে আসতে থাকেন শত শত শৌখিন মাছ শিকারি। সকাল ১০টা বাজতেই কোমড়ে ও মাথায় গামছা বেঁধে পলো নিয়ে মাছ শিকারে ঝাঁপিয়ে পড়েন নানা বয়সের মানুষ। পলোর পাশাপাশি হাতা জাল, উড়াল জালসহ নানা ধরনের মাছ ধরার ফাঁদ নিয়ে হইহুল্লোড়ে মেতে ওঠেন সবাই। আশপাশের গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে পেশাদার ও শৌখিন মাছ শিকারিরা ‘পলো বাওয়া’ উৎসবে অংশ নেন। দুপুর পর্যন্ত চলা এ উৎসবে শিকারিদের হাতে ধরা পড়ে বোয়াল, আইড়, শোলসহ নানা প্রজাতির দেশীয় বড় বড় মাছ। শিকারের মধ্যে অনেকেই মাছ ধরতে না পারলেও গ্রামবাংলার হারানো এমন উৎসবে অংশ নিতে পেরেই খুশি।

তবে মাছ ধরতে আসা শৌখিন শিকারিরা বলেন, এক সময় জেলার বিভিন্ন বিলে প্রতি বছর পৌষ থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত ‘পলো বাওয়া’ উৎসবের আয়োজন করা হতো। কিন্তু দিন দিন নদী ও বিল ভরাট এবং দখল হওয়ার কারণে হারাতে বসেছে গ্রামবাংলার প্রাচীন এই ঐতিহ্য। মাছ ধরার উৎসবকে বাঁচিয়ে রাখতে নদী ও বিল রক্ষার দাবি মাছ শিকারিদের।

শৌখিন মাছ শিকারি আশিক মিয়া বলেন, বড়আন বিলে পলো দিয়ে মাছ ধরা এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এইদিনটির জন্য শত শত মাছ শিকারি অপেক্ষা করেন। এই উৎসবে যোগ দিতে পেরে আমরা খুশি।

রুবেল মিয়া বলেন, পলো দিয়ে মাছ শিকার করা অন্যরকম একটা আনন্দ। একসঙ্গে শত শত মানুষ যে যার মতো করে মাছ ধরার দৃশ্য অসাধারণ।

আমিন খান নামে অপর আরেক যুবক বলেন, এটা আমাদের গ্রামবাংলার হারানো সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিকে আমাদের মধ্যে টিকিয়ে রাখতে হবে।

আতুকুড়া গ্রামের মুরুব্বি আবদুল হেকিম বলেন, বড়আন বিলে প্রতি বছরই আমরা ‘পলো বাওয়া’ উৎসবের আয়োজন করে থাকি। প্রথমে গ্রামবাসী মিলে একটি তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়, পরে তা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট এই দিন এবং সময়ে শুধু আতুকুড়া গ্রামবাসী নন, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে শৌখিন শিকারিরা এসে মাছ শিকার করেন।

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।