BD SYLHET NEWS
সিলেটমঙ্গলবার, ১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১২:৩৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব


জানুয়ারি ২৯, ২০২৫ ৬:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিডিসিলেট ডেস্ক : ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গত ১৫ বছর দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দখল ও লুটপাট করে তৎকালীন সরকারের এমপি-মন্ত্রী ও সরকার ঘনিষ্ঠরা। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের ক্ষমতা বলে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আইআইইউসি), নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে সেখানে তৎকালীন সরকার ঘনিষ্ঠদের বসানোর ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য।

তবে ৫ আগস্ট হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দখলদার ওইসব এমপি মন্ত্রী ও সরকার ঘনিষ্ঠরাও লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন। কোথাও নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নিয়েছেন পুরোনো মালিক ও অর্থদাতারা। আবার কোথাও বিশ্ববিদ্যালয়ে না এসে পুরোনো ট্রাস্টিরাই লুকিয়ে চালাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়। পুরোনো মালিকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল ফিরিয়ে নেয়া ও আওয়ামী ঘনিষ্ঠদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখলেও ইউজিসির স্বীকৃতি নিয়ে রয়েছে আলোচনা। উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোনোদের মালিকানা ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কীভাবে বিবেচনায় নেবে সেটা দেখার বিষয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ক্ষমতা ও দায়িত্বের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ধারা ১৬ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি), প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর (প্রো-ভিসি) এবং ট্রেজারার নিয়োগের জন্য, যথাক্রমে, ধারা ৩১, ৩২ এবং ৩৩ এর বিধান সাপেক্ষে চ্যান্সেলরের কাছে প্রস্তাব পেশ এবং সিন্ডিকেট কর্তৃক প্রণীত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন ও চ্যান্সেলরের কাছে এটি প্রেরণের কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু শীর্ষ এসব পদের নিয়োগের সুপারিশ কিংবা চ্যান্সেলরের কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য যে বৈধ ট্রাস্টি বোর্ড থাকতে হবে তেমনটি নেই বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কিংবা মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাড়াও বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সংক্রান্ত জটিলতা থাকা আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উঠে এসেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের অনুসন্ধানে।

এরমধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আইআইইউসি), প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি এবং অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি। তবে এরমধ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।

২০১০ সালে করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনেও দখল-পুনর্দখলের সমস্যা মেটানোর কোনো নির্দেশনা নেই। সাম্প্রতিক নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সংক্রান্ত জটিলতা দেশের উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ানো সেটিরই প্রমাণ। বিষয়টি নিয়ে উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা ইউজিসির সাথে কথা হলে তারা জানায়, বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। তবে ইউজিসি চায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইন মেনে প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতাদের মাধ্যমে কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক। বিষয়টি নিয়ে তারাও কাজ করছেন। তবে একাই ইউজিসি বিষয়টি সমাধান করতে পারবে না।

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. সুলতান মাহমুদ ভূইয়া বলেন, আমরা খুব জোরালো কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করছি। তবে এখনো সেগুলো চূড়ান্ত হয়নি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাস্টিদের নিয়ে ঝামেলা চলছে। কোথাও শিক্ষার্থী আবার কোথাও ট্রাস্টিদের নিজেদের মধ্যে। আমরা চাইছি, ট্রাস্টিরা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো অফিস না থাকে। এছাড়া ট্রাস্টিদের পরিবারের কেউ যেন পুনরায় ট্রাস্টি কিংবা ভিসি ও প্রো-ভিসি হিসেবে নিয়োগ না পায় সেটা নিয়েও আমরা পত্র জারি কারার চিন্তা করছি। সামগ্রিকভাবে যেসব কাজ শিক্ষার পরিবেশকে নষ্ট করে এমন প্রতিটি সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছে কমিশন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সর্বোচ্চ নির্বাহী অফিসার হিসেবে উল্লেখ করে এই পরিচালক বলেন, ভিসিদের উপর যদি খবরদারি করা হয় তাহলে সেখানকার শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যাহত হয়। ভিসিদের সাথে ট্রাস্টিদের অহরহ মতবিরোধের ঘটনা ঘটছে। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে ভিসিদের সাথে ট্রাস্টিদের অনেক ঝামেলার কথা উঠে আসছে। তাই ভিসিদের আর্থিক ও অ্যাকাডেমিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও কাজ করছে ইউজিসি।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ ট্রাস্টি কিংবা ‍ভিসি-প্রোভিসি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ বা সিদ্ধান্তের নিতে হলে আমার সেগুলোর জন্য কমিশন থেকে একটা কমিটি গঠন করে দেই। এরকম কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে ইতোমধ্যে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বাকিদের বিষয়ে কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ট্রাস্টি নিয়োগের সিদ্ধান্ত ইউজিসির হতে নয়। এটা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্ট্রাকচারাল বিষয়, যেখানে অন্য ট্রাস্টিরা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। তবে যখন এ সংক্রান্ত কোনো ক্রাইসিস তৈরি হয় তখন ইউজিসি ঘটনার তদন্ত করে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করে। মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

চলমান সংকট নিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে সংকট চরমে কিংবা শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে সেগুলো নিরসনে আমরা এখন পর্যন্ত ফোকাস করছি। কিন্তু যে-সব প্রতিষ্ঠানে মোটামুটি কার্যক্রম অব্যাহত আছে সেগুলোর বিষয়ে এখনো নজর দেয়নি কমিশন। তবে আমরা সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।