শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন
তাহমীদ ইশাদ রিপন, বড়লেখা প্রতিনিধি : গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা জনগনকে জিম্মি করে দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল, দেশে কোনো আইনের শাসন ছিল না, এমনকি মানুষের কোনো বাক স্বাধীনতা ছিল না। ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তের বিনিময়ে অবশেষে স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। এটা আল্লাহ’র এক বিরাট মেহেরবানি। এ বিজয়কে ইসলামের বিজয়ে পরিণত করতে হলে আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে জাতিকে পথ দেখাতে হবে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১০টায় মৌলভীবাজারের বড়লেখায় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ওলামা মাশায়েখ পরিষদ বড়লেখা উপজেলা শাখার উদ্যোগে ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সিলেট অঞ্চলের টিম সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান।
তিনি আরোও বলেন, গত ১৮টি বছর পুরো দেশ ছিলো একটি কারাগার, অন্যদিকে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে দুর্নীতির মহোৎসবে মত্ত্ব ছিলো আওয়ামীলীগ। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরি করে কোটা পদ্ধতি ও প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে প্রশাসনের সর্বত্র তারা অথর্ব ও দুর্নীতিবাজ লোক দিয়ে দেশকে দুর্নীতি বৈষম্যের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। ছাত্র-জনতার ত্যাগ ও কুরবানীর মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ সেই জিম্মি-দশা থেকে মুক্তি পেয়েছে, নতুন করে দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, ইসলাম, মুসলিম জাতিসত্তা গত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর উপর নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে, শহীদ আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ হাজারো নেতা-কর্মীকে শহীদ করা হয়েছে। আল্লাহ তাঁর অশেষ রহমতে আমাদের সেই দুঃশাসন থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
অতীতেও এ উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ হয়ে জালিমের বিরুদ্ধে বিপ্লবী ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁরা ত্যাগ ও কুরবানীর পাশাপাশি ইলম ও হেকমতের সাথে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দিয়েছেন। মুজাদ্দিদে আলফেসানী, শায়েখ আহমদ সারহিন্দ, সৈয়দ আহমদ বেরলভী (রহি.) সহ ওলামায়ে কেরাম সামনে থেকে জাতীকে পথ দেখিয়েছেন। তাই আলেম সমাজের ঐক্য অটুট রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, প্রয়োজনে ছাড় দিয়ে হলেও আমাদের শীসাঢালা ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এখনো কাজ করে যাচ্ছে তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে ও আল্লাহর সাহায্যের উপযোগী হতে হবে। আলেমদের এখন দায়িত্ব হলো এই উম্মাহকে জাগিয়ে তোলা, সত্যকে জাতীর কাছে তুলে ধরা। তরুণ প্রজন্মের আলেমদের বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে, এক্ষেত্রে দুনিয়ার স্বার্থের চেয়ে আখেরাতের প্রত্যাশায় দ্বীনের পথে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের মানুষের মধ্যে ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ অর্থাৎ শরীয়া মেনে চলার জন্য আগ্রহী করে তুলতে হবে। মানুষের মধ্যে আমরা পূর্ণাঙ্গ ইসলামের পদ্ধতি অনুসরণে এক ধরনের ভীতি কাজ করে, আলেমদের এই ভীতি দূর করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, ইসলামী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে হবে। কিছু কিছু আলেম এখনও তাগুতি শক্তিকে সহযোগিতা করছে, অনৈসলামিক সংস্কৃতিসহ ইসলাম বিদ্বেষী চিন্তা ধারা লালন করছি। যাদের সুযোগ আছে লেখালেখি করতে হবে, অন্তত নিয়মিত মানুষের হৃদয়ে আশা জাগানিয়া ইসলামী বিধান অনুসরণের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করতে হবে।
উলামা মাশায়েখ পরিষদ বড়লেখা উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মুজাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা খালেদ আহমদ ভানুগাছির সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান, ওলামা মাশায়েখ পরিষদের জেলা সভাপতি মাওলানা শেখ আব্দুল হক, বড়লেখা উপজেলা আমীর এমাদুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের উপজেলা সভাপতি মাওলানা কাজি এনামুল হক প্রমূখ।