বিডি সিলেট:: সিলেট জেলা বিএনপির গেল কাউন্সিলে সভাপতি পদপ্রার্থী বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের সন্তান আবুল কাহের চৌধুরী শামীমের সমর্থকরা গোলাপগঞ্জে পৃথক সভা সমাবেশ করেছেন বলে জানা গেছে এবং সে সভাকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপি ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি মধ্যে টানাপোড়েনের সংবাদ ইতোমধ্যে চাউর হয়েছে। গোলাপগঞ্জ বিএনপির অন্তঃকোন্দলে মরিয়া হওয়ার প্রকাশ্য চিত্র ফুটে উঠেছে ইতোমধ্যেই। সূত্র জানায়,গত ২৭ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে এ নিয়ে সময়ের ব্যবধানে গোলাপগঞ্জে পৃথক পৃথক সভা সমাবেশ করেছেন দুই বলয়ের নেতাকর্মীরা।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র একাধিক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,প্রকাশ্যে না আসলেও গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র জনসভা একই তারিখে,একই স্হানে এবং একই সময়ে পর পর দু’টি সভা করেছে জাতীয়তাবাদী দলের দুটি বলয়। প্রথম সভাটি সাবেক জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা আবুল কাহের চৌধুরী শামীমের সমর্থকরা করেছেন এবং দ্বিতীয় সভাটি করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির কাইয়ূম -এমরান বলয়ের নেতাকর্মীরা।
এরই জেরধরে গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) শামীম বলয়ের নেতা,গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলালুজ্জামান হেলালকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে সিলেট জেলা বিএনপি।জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। একই দিন হেলালুজ্জামান হেলাল ছাড়া ও শামীম বলয়ের সিনিয়র তিন নেতাকে শোকজ করে জেলা বিএনপি। এই তিনজন হচ্ছেন,গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিন উদ্দিন আহমদ,গোলাপগঞ্জ পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল আহমেদ,পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামিল আহমেদ চৌধুরী। নোটিশে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। যদি কোন সদুত্তর না মেলে তাহলে স্হায়ী ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে জেলা বিএনপি। এদিকে সাময়িক বহিষ্কার ও শোকজের প্রতিবাদে গত বুধবার (২১সেপ্টেম্বর) গোলাপগঞ্জ পৌর শহরের চৌমুহনীতে এক প্রতিবাদ মিছিল ও পথসভা করেছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির শামীম বলয়ের নেতাকর্মীরা। এসময় জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা কটাক্ষ মূলক স্লোগান দেন বিক্ষোভকারী নেতা কর্মীরা।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির মধ্যে অন্তঃ কোন্দল সম্পর্কে গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি নোমান উদ্দিন মুরাদ বলেন,একই দিনে, একই স্থানে এবং একই সময়ে দুটি সভা হয়েছে ঠিক কিন্তু এটি একটি ভুলবোঝাবুঝির কারণে হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে মিছিল সহকারে দলীয় নেতাকর্মীরা এসেছিলেন, অনেকেই মনে করেছেন প্রোগ্রাম শেষ হয়ে গেছে, তাই তারা অপর সভাটি করেছেন। অন্তঃকোন্দল না থাকলে একই স্হানে দ্বিতীয় বার সভা-সমাবেশ ও সাময়িক বহিষ্কার এবং শোকজের ঘটনা কী করে ঘটলো? এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা বিএনপির এই সভাপতি বলেন, স্হানীয় বিএনপি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে, ব্যক্তি স্বার্থে কেউ কেউ বহিষ্কার ও শোকজের মুখে পড়তে পারেন, এটি সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। বহিষ্কার ও শোকজের বিষয়টি জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলতে পারবেন।
স্হানীয় সূত্র জানায়,সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির মধ্যে অন্তঃকোন্দল চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, হেলালুজ্জামান হেলালকে সাময়িক বহিষ্কার ও তিনজনকে শোকজের ঘটনায় সোস্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে,পক্ষে-বিপক্ষে বইছে সমালোচনার ঝড়। হয়েছে প্রতিবাদ মিছিল ও সভা।
এ বিষয়ে সাময়িক বহিষ্কার হওয়া গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলালুজ্জামান হেলালের সাথে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, সাময়িক বহিষ্কারের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে আপনি শুনেছেন তা এখনো আমি হাতে পাইনি, হাতে না পেলে তো কিছু বলা যাচ্ছে না।তিনি জানান,বহিষ্কারের সংবাদ শুনে গোলাপগঞ্জ বিএনপি,ছাত্রদল ও যুবদলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা শহরের চৌমুহনীতে জড়ো হয়ে মিছিল করেছে কিন্তু পুরোপুরি করতে দেওয়া হয়নি। তিনি বাঁধা দিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন,আমি কারো সমর্থক নয়,আবুল কাহের শামীমেরও সমর্থক নয়,আমি জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থক।
শোকজ হওয়া গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিন উদ্দিন আহমেদ প্রতিবেদককে বলেন, আমাকে শোকজ করা হয়েছে এমন কোন নোটিশ আমি এখন পর্যন্ত হাতে পাইনি, তবে সোস্যাল মিডিয়া ও স্হানীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে শুনেছি, আমাকে শোকজ করা হয়েছে। আমি ১৯৯২ সাল থেকে ছাত্র জীবন থেকে ঢাকা দক্ষিণ ডিগ্রী কলেজ থেকে জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পরবর্তীতে সিলেট মদন মোহন কলেজ ও সিলেট ল’ কলেজসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছি। দুই যুগের ও বেশি দিন ধরে জীবনের সোনালী সময় খুইয়ে গোলাপগঞ্জ যুবদল সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছি। তৃণমূলের নেতাকর্মীর ভোটে আমি গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির ফার্স্ট জয়েন্ট সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছি।অনেক সময় কাজের সফলতা দেখে দল আমাকে ক্রেস্ট দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির স্বীকার আমি কোনদিন হইনি,যে পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছি এখন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান,সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সফল সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীমের সাথে অবশ্যই ভালো সখ্যতা ও সম্পর্ক আছে। আবুল কাহের শামীম সিলেট জেলা বিএনপির একজন সফল সভাপতি।
শোকজের সংবাদ শুনে প্রতিবাদ মিছিল সম্পর্কে তিনি জানান,যেহেতু দলে কাজ করি।তাই তৃণমূলের কিছু নেতাকর্মী এই সংবাদ শুনে গোলাপগঞ্জ পৌর শহরের চৌমুহনীতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে চেয়েছিলো। আমরা তা বারণ করেছি। বিএনপি’র সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমেদ চৌধুরীকে নিজের অভিভাবক দাবী করে আমিন উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন,জেলা নেতৃবৃন্দ আমার অভিভাবক। তাদের সিদ্ধান্ত দলের স্বার্থে আমাদের মেনে নিতে হবে। কী কারণে আমাদের শোকজ করেছেন তারাই ভালো জানবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনি:সহ সভাপতি হেলালুজ্জামান হেলালকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে এবং ৩ জনকে শোকজ করা হয়েছে।দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে,এটি একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। সিলেট জেলা বিএনপি’তে কোন্দল আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,সিলেট জেলা বিএনপিতে কোন কোন্দল নেই,দল ঐক্যবদ্ধ আছে। আপনি যা শুনেছেন তা সঠিক নয়।