BD SYLHET NEWS
সিলেটসোমবার, ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১:১১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পবিত্র রমজান মাসে স্বাস্থ্য সচেতনতা


মার্চ ১৬, ২০২৫ ৩:৫৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ইসলাম ডেস্ক : ইবাদত-আত্মশুদ্ধির মাস রমজান। এই মাস অন্তত চারটি বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র মর্যাদাপূর্ণ:

(ক) এই মাসে কোরআন নাজিল হয়,

(খ) এই মাসেই রয়েছে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ লাইলাতুল কদর,

(গ) এই মাসে শয়তান বন্দি থাকে,

(ঘ) এই মাস মহান আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহিমায় সমুজ্জ্বল।

সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে আছে, তোমাদের মধ্যে যে কেউ এই মাস পাবে সে যেন এই মাসে অবশ্যই রোজা রাখে। এর ইংরেজি Who is present during that month should spend it in fasting.

দুঃখজনক সত্য, কিছু মানুষ রমজানে বেশি কেনাকাটা, ভোজন রসিকতায় মেতে ওঠে, ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।

মনে রাখা ভালো, রোজা ভোজনে সংযমের মাধ্যমে খাদ্য-পুষ্টি ও সুস্থতার শিক্ষা দেয়। সুস্থতা ও অবসর মহান আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘স্বাস্থ্য ও অবসর—এই দুই নিয়ামতের বিষয়ে বেশির ভাগ মানুষ ধোঁকার মধ্যে রয়েছে।’ (বুখারি)

মানুষের মধ্যে কে উত্তম—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যার হায়াত দীর্ঘ হয় ও আমল হয় ভালো। (তিরমিজি)

সুস্থ দেহ, সুন্দর-সক্ষম মানবগোষ্ঠী বিনির্মাণে চিকিৎসা ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। রোগের প্রতিকার, প্রতিরোধ সম্পর্কে ধারণা আছে পবিত্র কোরআনে, আমি কোরআনে এমন বিষয় নাজিল করি, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত। (সুরা : বানি ইসরাঈল, আয়াত: ৮২)

জাতীয় কবির ভাষায়, ‘যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা নিত্যউপবাসী…।’

পবিত্র রমজানে আমরা কি তাদের কথা ভেবে দেখেছি? সঠিক খাদ্য-পুষ্টি ব্যবস্থাপনা ও সুস্বাস্থ্য পারস্পরিক পরিপূরক অথচ তা আমরা কয়জনই বা মেনে চলি? প্রিয় নবী (সা.) সব সময় স্বল্প পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করতেন।

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলের (সা.) ওফাত পর্যন্ত তাঁর পরিবারবর্গ একাদিক্রমে দুই দিন পেট ভরে যবের রুটি খাননি।’ (শামায়েলে তিরমিজি)
ইসলাম ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়’ জীবন সমর্থন করে না। বিশ্ব প্রতিপালকের ঘোষণা, ভূপৃষ্ঠের সব প্রাণীর জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিজে গ্রহণ করেছেন। (সুরা : হুদ, আয়াত : ৬)

কিন্তু মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও বঞ্চনার জন্য দায়ী মানুষের অসচেতনতা। সমাজের একাংশের ভোগাকাঙ্ক্ষা অন্যাংশের ভোগান্তির কারণ হয়।

অথচ সম্পদের সুষম বণ্টন প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, তাদের সম্পদে দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে। (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ১৯)
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘সে প্রকৃত ঈমানদার নয়, যে পেট ভরে খায় আর তারই প্রতিবেশী অভুক্ত রাত যাপন করে।’ (বাইহাকি)

প্রিয় নবী (সা.) আরো বলেন, ‘ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও…।’ (মুসলিম)

অপরিমেয়, অপরিকল্পিত খাদ্য গ্রহণে obesity (স্থূলতা)-র পথ ধরে আসে অ্যাজমা, ব্লাড প্রেসার, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস তথা A, B, C, D আদ্যক্ষরের ঘাতক ব্যাধি। মেদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেত্রভেদে মানুষের মেধা কমতে থাকে। কথায় বলে, ‘অনাহারে নাহি খেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ।’

পুষ্টিবিজ্ঞানীরা স্থূলতা হ্রাসের জন্য (ক) ১০০% ইচ্ছাশক্তি (খ) ধৈর্য (গ) খাদ্যতালিকা (ঘ) খাদ্য পরিকল্পনা (ঙ) ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেন। প্রিয় নবী (সা.) মুমিন ও কাফিরের মনস্তুষ্টিগত পার্থক্য বোঝাতে বলেন, ‘মুমিন খায় এক পাকস্থলীতে আর কাফির খায় সাত পাকস্থলীতে…। (বুখারি)

প্রিয় নবী (সা.) খাদ্যগ্রহণে সামাজিক সম্প্রীতি ও সুষম বণ্টন নিশ্চিতকরণের শিক্ষা দিয়ে বলেন, ‘দুজনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট, তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।’ (বুখারি)

অন্যত্র আছে, ‘একজনের খাবার দুজনের, দুজনের খাবার চারজনের, চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট।’ (মুসলিম)

প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের খাদ্যদ্রব্য মেপে নাও, এতে তোমাদের বরকত দেওয়া হবে।’ (বুখারি)

বস্তুত মানুষের ‘রিজিক’ শেষ না হলে তার মৃত্যু হয় না। বুঝতে হবে, মানুষ না খেয়ে মরে না, বরং বেশি খেয়ে, অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে কষ্ট পায়। তাই অপরিমেয় ও অপরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস থেকে বিরত থাকার জন্য পবিত্র রমজান হলো আদর্শ। পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে প্রিয় নবীর (সা.) ভাষায় মোনাজাত, ‘হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে সুস্বাস্থ্য কামনা করি…।’ (বায়হাকি)

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।