ইট-কাঠ-পাথরের এই শহরে একটি দিবস নগরবাসীর উৎসবের খোরাক জোগায়। দিবসকে ঘিরে ছুটির দিনগুলো হয়ে উঠে মহামূল্যবান। দিবসটি যদি হয় কোনো এক বিশেষ উপলক্ষ্যকে ঘিরে, তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু কখনো কখনো একই দিনে যদি আপনাকে দুই দিবস বা তার বেশি পালন করতে হয় তাহলে তা হয়ে উঠে মধুর বিড়ম্বনারা।
কোনটা রেখে কোনটা করবেন? কোন দিবসকে গুরুত্ব দিবেন? যেমন আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি, এই এক দিনে আপনার সামনে অনেকগুলো উপলক্ষ্য। কোনটা রেখে কোনটি হবে আপনারা দিবস? ভালোবাসা নাকি ফাল্গুন? বইমেলা নাকি শুক্রবার ছুটির দিনে পরিবারকে সময় দেয়া? এবার আবার এই দিন রাতে আবার পবিত্র শবে বরত।
এখানেই শেষ নয়! ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে পালিত হয় স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস এবং সুন্দরবন দিবস হিসেবে। তাই প্রশ্ন করাই যায়, আপনার দিবস হবে কোনটা? কিভাবে উদযাপন করবেন এমন মহান দিন?
১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি বিশ্বে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। আবার বাংলাদেশে সর্বশেষ সংস্কারকৃত বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে বসন্ত উৎসব তথা পহেলা ফাল্গুন উদযাপিত হয়। বাংলাদেশের মানুষ এ দিনটি ভালোবাসা এবং বসন্ত—এ দুই মিলেই উদযাপন করে থাকে।
এদিকে এ বছর শাবান মাস শুরু হয়েছে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে। সে অনুযায়ী আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌভাগ্যের রাত হিসেবে পরিচিত শবে বরাত। মহিমান্বিত এই রাতে তারা পরম করুণাময় মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে মগ্ন থাকেন। অতীতের পাপ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন।
এ বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি পবিত্র জুমাবারে পরেছে। সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন বলা হয় এ দিনকে। সেই সঙ্গে রয়েছে বইমেলা। শুক্রবার বার ছুটির দিনে বইমেলা চলে সকাল ১১টায় থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সাধারণত শুক্রবার অনেক ভিড় হয়ে থাকে বইমেলায়, এর মধ্যে ভালোবাসা দিবস ও ফাল্গুন হওয়ায় জনস্রোত দেখা যাবার আশংকা রয়েছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসেও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দেশের অনেকেই এই দিনটিকে পালন করেন স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসাবে। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খানের ঘোষিত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। সে বছর ১৭ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয় ছাত্র সংগঠনগুলো।
তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল ওই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে সচিবালয়ে স্মারকলিপি দেয়ার শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত একটি কর্মসূচী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ওই সমাবেশ ডাকে।
কিন্তু সেখানে পুলিশ গুলি করলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেদিন পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তবে মৃতদেহ পাওয়া যায় মাত্র দুজনের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাকি মৃতদেহগুলো গুম করে ফেলে। তাদের স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজি করে স্বজনদের কোন খোঁজ আর পাননি, এমনটাই জানিয়েছিলেন তৎকালীন সাবেক ছাত্রনেতা ও ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক মোশতাক হোসেন। সেদিন থেকেই এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৪ই ফেব্রুয়ারি পালিত হয় ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’।
এছাড়াও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালিত হয়ে আসছে। ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশের উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়।