BD SYLHET NEWS
সিলেটবৃহস্পতিবার, ২৭শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১:৫৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মালয়েশিয়ায় পরিবেশবান্ধব কৃষি বিপ্লবে সিলেটের বৃষ্টি খাতুন


জানুয়ারি ৩০, ২০২৫ ১২:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিডিসিলেট ডেস্ক : মালয়েশিয়ার পরিবেশবান্ধব কৃষিতে পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন সিলেটের বৃষ্টি খাতুন। খাদ্য ও কৃষি মানবজীবনের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যে কতটা প্রয়োজন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই খাদ্যকে টেকসই করতে আধুনিক প্রযুক্তি তথা ফার্টিলাইজার উদ্ভাবনেরও যে বিকল্প নেই তা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছে বিশ্ব।

সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের মেয়ে বৃষ্টি খাতুন মালয়েশিয়ার কৃষি খাতে স্থাপন করেছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তার কঠোর পরিশ্রম, উদ্ভাবনী মনোভাব এবং টেকসই কৃষির প্রতি অঙ্গীকার মালয়েশিয়ার কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। তার যাত্রা শুরু ২০১৭ সালে। মালয়েশিয়ার কোতা দামানসারার সেগি ইউনিভার্সিটির ডিপ্লোমা ইন হোটেল ম্যানেজমেন্টে। রান্না এবং টেকসই খাদ্যের প্রতি তার গভীর মনোযোগ তাকে এ পথে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছে।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় খাদ্য ঘাটতি এবং নিরাপত্তা নিয়ে তার নতুন উপলব্ধি তাকে ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার’ প্রকল্পের সূচনা করতে অনুপ্রাণিত করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এক প্রকার যুদ্ধ করে ৫৯টি দেশের ৭ হাজার ৫শ শিক্ষার্থী এবং সাতটি দেশের শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা দেন তিনি। কোভিডকালীন তার এই অভিজ্ঞতা জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করার অনুপ্রেরণা দেয়।

সানওয়ে ইউনিভার্সিটিতে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নকালে তিনি খাদ্য বর্জ্যের ওপর গবেষণা শুরু করেন। প্রফেসর আগামুথু পারিতাম্বি, যিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিবেশ বিজ্ঞানে বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর একজন, তার তত্ত্বাবধানে বৃষ্টি খাতুন পিএইচডি গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। তার গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো এশিয়ান কৃষিতে খাদ্য বর্জ্য ব্যবহার করে টেকসই কৃষির ফার্টিলাইজার মডেল তৈরি করা।brist6 20250130091809 - Bd Sylhet Newsবৃষ্টি খাতুন বর্তমানে মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর রাজ্যের শাহ আলমে, কেবুনিতি বেরহাদের এগ্রোপার্কে একটি গবেষণামূলক প্রকল্প পরিচালনা করছেন। এই প্রকল্পে তিনি খাদ্য বর্জ্যকে বোকোশি কম্পোস্টিং পদ্ধতির মাধ্যমে রূপান্তর করে মাটির উর্বরতা এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পরীক্ষা করছেন। তার গবেষণার লক্ষ্য হলো; খাদ্য বর্জ্যের মাধ্যমে মাটির কার্বন এবং নাইট্রোজেন ভারসাম্য বৃদ্ধি করে কৃষি উৎপাদনকে আরও টেকসই করা।

এরই মধ্যে বৃষ্টি খাতুন মালয়েশিয়ার ইপোহ রাজ্যে জাপানি তরমুজ খামারে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করেছেন। তার এ জৈব চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করে মাসিক ফসলের উৎপাদন ৩ হাজার ইউনিটে বৃদ্ধি করেছেন। এছাড়া তার এ উদ্ভাবনী মডেল কৃষি বর্জ্যকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করেছে, যা কৃষিতে টেকসইয়ের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেছে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৃষ্টি খাতুন টেকসই কৃষি বিষয়ে আন্তর্জাতিক কি-নোট স্পিকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি পুত্রজায়া ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত স্মার্ট ফার্মিং এবং ফুড সিকিউরিটি ইভেন্টসহ বেশ কয়েকটি সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন। তার আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে ছিলো; টেকসই কৃষি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং উদ্ভাবনী কৃষি প্রযুক্তিকেন্দ্রিক।

তিনি মালয়েশিয়ার তেরোনো বাটুগাজার কাঁচা বাজারে টেকসই প্রকল্প পরিচালনা করছেন। এখানে তিনি স্থানীয় সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় ১ কিলোমিটার এলাকায় খাদ্য বর্জ্য ল্যান্ডফিলে পাঠানোর পরিবর্তে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন। তার ‘এক কাপ কফি কিনুন, স্থানীয় কৃষিতে অবদান রাখুন’ সম্পর্কিত সামাজিক প্রচারাভিযানে মালয়েশিয়ার কমিউনিটিতে বেশ সাড়া ফেলেছে।

তার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য; টেকসই কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। আর এর মাধ্যমে এশিয়ান কৃষিতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী মডেল তৈরি করা।

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।