গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট সিলেট জেলা নেতৃবৃন্দ (১৯ নভেম্বর) শুক্রবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ওসমান হাদি নির্বাচনের প্রচারণা চালিয়ে ফেরার সময় গত ১২ ডিসেম্বর অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল আনুমানিক রাত ১০টায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু গোটা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্বক অবনতির চিত্র পুনরায় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। জুলাই অভ্যুত্থানের পর মানূষ একটা নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু গত দেড় বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের একের পর এক ব্যর্থতা সেই আশাকে দূরাশায় পরিণত করেছে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে, মব সন্ত্রাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সরকারের তরফ থেকে এগুলো বন্ধে কোন কার্যকর উদ্যোগ তো নেয়া হয়ইনি বরং কখনও কখনও প্রেসার গ্রুপ বলে এতে মদদ যোগানো হয়েছে, প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম-খুন ইত্যাদি ঘটনা এই সরকারের আমলেও অতীতের ফ্যাসিবাদী আমলের মতোই ঘটে চলেছে। ওসমান হাদির মতো জুলাই আন্দোলনের একজন সম্মুখযোদ্ধার মৃত্যু এর সর্বশেষ সংযোজন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতির প্রেক্ষিতে এর আগেও বিভিন্ন মহল থেকে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছিল। বর্তমান সময়ে হাদির মৃত্যু, বিভিন্ন প্রতিঠানে হামলা লুট অগ্নিসংযোগের ঘটনা প্রতিহত করতে ব্যর্থতার দায় নিয়ে আর একদিনও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই দায়িত্বে থাকার কোন নৈতিক অধিকার আছে বলে আমরা মনে করি না।
বিবৃতিতে যুক্তফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ বলেন, ওসমান হাদির মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। কিন্তু এই সুযোগে একটা উগ্র ধর্মান্ধ ফ্যাসিস্ট শক্তি এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে তাদের হীন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে গতকাল রাতব্যাপী ঢাকায় এবং সারাদেশে তান্ডব চালানো হয়েছে। ছায়ানট ভবন, প্রথম আলো ,ডেইলি স্টার ,উদীচী কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনা ঘটেছে। ডেইলি স্টার কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক, স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম লড়াকু কন্ঠস্বর, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীরের উপর হামলা করা হয়েছে, তাঁকে লাঞ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও গতকাল ময়মনসিংহে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে একজন শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশের মতো সিলেটে প্রথম আলো কার্যালয়,আলপাইন রেস্টুরেন্ট, একাত্তর টিভি সাংবাদিকদের উপর হামলার এসকল ঘটনা দেশকে একটা চূড়ান্ত নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাবে এবং দেশে একটা গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলে নেতৃবৃন্দ আশংকা প্রকাশ করেন।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে বানচাল করে নিজেদের হীন স্বার্থ-সুবিধা চরিতার্থ করতে একটি মহল এই নৈরাজ্যকে উসকে দিচ্ছে। সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে নেতৃনৃন্দ বলেন, অবিলম্বে এই নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করুন, হাদির হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনুন এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে তৎপর হোন। কেননা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন বিকল্প এই মূহুর্তে নেই।
জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, অহেতুক কোন উগ্র গোষ্ঠীর প্ররোচনায় পা না দিয়ে হত্যাকারীদের ধরতে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করুন, গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার থাকুন।
বিবৃতিদাতা নেতৃবৃন্দ হলেন সিলেট জেলা সিপিবি সভাপতি ফরহাদ হোসেন, বাংলাদেশ জাসদ মহানগর শাখার সভাপতি এডভোকেট জাকির আহমদ, বাসদ সিলেট জেলা আহ্বায়ক আবু জাফর, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজ আহমদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) জেলা সমন্বয়ক সঞ্জয় কান্ত দাশ, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান, বাসদ জেলা সদস্য সচিব প্রণব জ্যোতি পাল, বাংলাদেশ জাসদ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজাত কবির, প্রমূখ।
