বিডি সিলেট ::- বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির শীর্ষ নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর বিধিনিষেধ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম এবং সাম্প্রতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়, ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং এমন পরিবেশ তৈরি করা, যাতে জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে ব্যালটের মাধ্যমে তাদের মত প্রকাশ করতে পারে। এ জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা সতর্ক করে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভাবে স্থগিত করা কিংবা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করা হলে তা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
চিঠিতে স্পষ্ট করে বলা হয়, সমষ্টিগত রাজনৈতিক দায় আরোপ নয়—ব্যক্তিগত অপরাধের ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচার নিশ্চিত করাই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।
মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। পাশাপাশি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়। এসব ঘটনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রতিশোধ মূলক রাজনীতির পরিবর্তে ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পদক্ষেপই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করবে। একই সঙ্গে সমিতি গঠন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র আশা প্রকাশ করেছে, অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার এসব সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণের অধিকার রয়েছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার বেছে নেওয়ার, যেখানে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকবে।
শেষাংশে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে সহায়তা করতে ওয়াশিংটন প্রস্তুত রয়েছে।
“যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের চিঠি পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদ”
২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
ড. মুহাম্মদ ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
তেজগাঁও, ঢাকা–১২১৫
বাংলাদেশ
মাননীয় ড. ইউনূস,
বাংলাদেশে জাতীয় সংকটের এই সময়ে ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার আপনার সদিচ্ছাকে আমরা স্বাগত জানাই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে রাজনৈতিক পরিসরের সব পক্ষ অংশগ্রহণ করতে পারে এবং ব্যালটের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে বাংলাদেশের জনগণের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হয়। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সততা ও নিরপেক্ষতার ওপর আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারও অপরিহার্য।
আমরা উদ্বিগ্ন যে, যদি সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম স্থগিত রাখে অথবা ত্রুটিপূর্ণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম পুনরায় স্থগিত করে, তাহলে এসব লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং বহু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক উল্লেখ করেছেন যে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। এছাড়া, ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত একটি তথ্য-অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে তাদের ধারণা।
এই ঘটনাসহ অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য প্রকৃত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হলে প্রতিশোধের চক্র চলমান রাখার পরিবর্তে তা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করবে। সমিতি গঠনের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার নীতি—সমষ্টিগত অপরাধ আরোপের পরিবর্তে—মানবাধিকারের মৌলিক ভিত্তি।
আমরা উদ্বিগ্ন যে, কোনো একটি রাজনৈতিক দলের সব কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত, ব্যক্তিগতভাবে অপরাধ বা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচারের মুখোমুখি করার পরিবর্তে, এসব নীতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
আমরা আশা করি, আপনার সরকার অথবা ভবিষ্যতে নির্বাচিত কোনো সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে। সর্বোপরি, বাংলাদেশের জনগণের অধিকার রয়েছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এমন একটি নির্বাচিত সরকার বেছে নেওয়ার, যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে এবং জনগণের কণ্ঠস্বর যথাযথভাবে প্রতিনিধিত্ব পায়।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আগামী মাসগুলোতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে আমরা আপনার সরকার এবং ভবিষ্যতের যেকোনো নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
বিনীত,
গ্রেগরি ডব্লিউ. মিকস
র্যাংকিং সদস্য
হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি
বিল হুইজেঙ্গা
চেয়ারম্যান
সাউথ ও সেন্ট্রাল এশিয়া বিষয়ক সাবকমিটি
সিডনি কামলেগার-ডোভ
র্যাংকিং সদস্য
সাউথ ও সেন্ট্রাল এশিয়া বিষয়ক সাবকমিটি
জুলি জনসন
মার্কিন কংগ্রেস সদস্য
থমাস আর. সুয়োজি
মার্কিন কংগ্রেস সদস্য
