BD SYLHET NEWS
সিলেটবুধবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সকাল ৬:০১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

১৪ মাসে ১৭ খুন, উৎকণ্ঠায় সাধারণ মানুষ


ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ১:৪৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রামের রাউজানের একের পর খুন, গুলি, হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ। কখন কী ঘটে এমন শঙ্কা তাড়া করছে জনসাধারণের মনে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এ উপজেলায় ১৭ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সম্প্রতি পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে কিছু অস্ত্র উদ্ধার হলেও প্রকৃত খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএনপির দুই গ্রুপকে কেন্দ্র করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে দেড় বছরে রাউজানে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুনের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের তথ্যমতে, রাউজানে ৫ আগস্টের পর ১৪ মাসে যে ১৭ জন খুন হয়েছেন, এর মধ্যে ১৩ জনই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কর্মী।

২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট রাউজানে পিটিয়ে খুন করা হয় আব্দুল মান্নান নামের এক ব্যক্তিকে। এর তিন দিনের মাথায় ১ সেপ্টেম্বর মো. ইউসুফ মিয়া নামে আরেক যুবক খুন হয়। এর পর থেকে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটতে থাকে রাউজানে। ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর আজম খান ও ১১ নভেম্বর আবু তাহের নামে দুজন খুন হন।

চলতি বছরের (২০২৫) ২৪ জানুয়ারি ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলমকে নোয়াপাড়া জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন।

১৯ ফেব্রুয়ারি মুহাম্মদ হাসান নোয়াপাড়া মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা তাকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। ১৯ এপ্রিল যুবদল কর্মী মানিক আবদুল্লাহকে (৩৬) বাগোয়ান ইউনিয়নে রাতে একদল দুর্বৃত্ত গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। তিনি বিএনপি নেতা গিয়াস কাদের চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। ২২ এপ্রিল মুহাম্মদ ইব্রাহিম (৩০) নামে এক যুবদল কর্মী খুন হন। সদর ইউনিয়নের শমসেরনগরে প্রকাশ্যে দিবালোকে চায়ের দোকানের সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনিও স্থানীয় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ৭ অক্টোবর বিএনপিরকর্মী ও ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আব্দুল হাকিমকে (৫২) রাউজানের সীমানাসংলগ্ন খামারবাড়ী থেকে ফেরার পথে চলন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গুলি করে হত্যা করা হয়।

থানা-পুলিশ জানায়, বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাকে ‘ভাড়াটে খুনি’ দিয়ে হত্যা করানো হয়। ২৫ অক্টোবর যুবদলের মুহাম্মদ আলমগীর আলমকে (৫০) পশ্চিম রাউজান চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি এলাকায় ‘ডাকাত আলম’ নামেও পরিচিত ছিলেন। কিন্তু রাউজানের একের পর এক খুনের ঘটনায় স্তব্ধ সাধারণ মানুষ, প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এসব ঘটনায় এলাকায় মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গিয়াস কাদের চৌধুরী এবং উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা চলে আসছে রাউজানে। দুই নেতার বাড়ি একই উপজেলায় হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।

পুলিশ জানায়, রাউজানে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। এ পর্যন্ত ৫৭৭টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে যৌথ বাহিনী ১৪০ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের মুখপাত্র আতরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল বলেন, রাউজানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। বিশেষ করে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার অনুসারীরা রাউজানের পরিস্থিতি খারাপ করেছে। বালুমহাল ইজারা, চাঁদাবাজি, এলাকায় আধিপত্যকে কেন্দ্র করে এ খুনের ঘটনাগুলো ঘটেছে। পুলিশ অস্ত্র উদ্ধার, আসামি গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে।

রাউজানের তৈয়বিয়া রহমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষক মাওলানা আবুল বশর বলেন, ‘বিএনপির দুই নেতার কারণে রাউজানে অশান্তি বিরাজ করছে। ওই দুই নেতা চাইলে এ উপজেলা আজকেই শান্ত হয়ে যাবে। এলাকাবাসী এ দুই নেতাকে বয়কট করা শুরু করেছেন। তাদের কাউকে যেন রাউজান থেকে বিএনপি মনোনয়ন না দেন এটিই কামনা আমাদের।’

রাউজানের বাসিন্দা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক নুর মুহাম্মদ রানা খবরের কাগজ বলেন, দেশের অন্যান্য স্থানে পুকুরে সেচ দিলে মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু রাউজানের পুকুরে সেচ দিলে অস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায় পুরোটা প্রশাসনের। প্রশাসন বর্তমানে যেমন তৎপরতা শুরু করেছে তা আগে থেকে শুরু করলে এত খুন রাউজানে হতো না।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, রাউজানের চুরি, ডাকাতিসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু হুট করে খুনের ঘটনা ঘটে যায়। এটিই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু সম্প্রতি পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশা করছি, ধীরে ধীরে খুনখারাবিও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। সূত্র: খবরের কাগজ

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।