জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণদণ্ডের রায়ে ‘কষ্ট’ পাচ্ছেন বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আসামিপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন।
রায়ের পর সাংবাদিকদের সামনে এসে তিনি বলেন, “আমি কষ্ট পাচ্ছি। আমার এইজন্যই কষ্ট, এই জন্যই কষ্ট পাচ্ছি- আমার আসামির সাজা হয়েছে। সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে। আমাকে কষ্ট দিবে না? এটিই স্বাভাবিক। আমি কষ্ট পাচ্ছি। এটাই আমার বক্তব্য।”
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করে।
ট্রাইব্যুনালের অপর দুই বিচারক হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম রায় হওয়া এই মামলায় আমির হোসেন রাষ্ট্রের তরফে নিযুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে লড়েছেন।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও এ মামলায় প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপর আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন নিজেকে রাজসাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করায় তাকে লঘুদণ্ড পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায় মেনে নিয়ে আমির হোসেন বলেন, “রায়টা আমার পক্ষে হয়নি, বিপক্ষে গেছে। এজন্য আমি ক্ষুদ্ধ। কষ্ট লালন করতেছি। আসামিদের ফাঁসির রায়ে আমি কষ্ট পেয়েছি।”
এ রায়ের বিপক্ষে আপিলে যাওয়ার ‘সুযোগ নাই’ তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমার পক্ষে এই মামলায় কোনো আপিলের সুযোগ নাই, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার মক্কেলরা এসে মাননীয় ট্রাইব্যুনালের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন অথবা তারা কোনোভাবে গ্রেপ্তার হবেন। এর আগ পর্যন্ত কোনো আপিলের ডিভিশনে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নাই।
“আপনি তো দেখেছেন, আপনারা তো দেখেছেন যে আমাকে রায়ের কপিও মাননীয় ট্রাইব্যুনাল দিবে না বলেছে। এই যে দিবে না, সেটাও আইনে আছে।”
দোর্দণ্ড প্রতাপে দেড় দশক দেশ শাসন করা হাসিনা ১৫ মাস আগের ওই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে এখন পালিয়ে আছেন ভারতে। আসাদুজ্জামানও ভারতে পলাতক আছেন বলে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম সাবেক সরকারপ্রধান, যার মাথার ওপর ঝুললো মৃত্যুদণ্ডের খাঁড়া।
আর সেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকেই শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজার রায় এল, যে আদালত তার সরকার গঠন করেছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য।
এই ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের ভিত্তিতেই আওয়ামী লীগের আমলে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ শীর্ষ নেতা এবং বিএনপির একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনার পক্ষে যেসব যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছিল তা আদালত আমলে নেয়নি তাহলে?
জবাবে আমির হোসেন বলেন, “আমার যুক্তিতর্ক নেয়নি তা তো বলব না। আমার যুক্তিতর্ক তো ওনারা নিয়েছেন। অনেক কিছু তো নিয়েছেন।
“নেওয়ার পরে মাননীয় ট্রাইব্যুনালের কাছে মনে হয়েছে, আমার যুক্তির চাইতেও ওনাদের যুক্তি আরও বেশি শক্তিশালী। সেটা মনে করে তারা সেইভাবে রায় দিয়েছেন। অতএব আমারটা নেয়নি, এই যে আমি বলব না। আমি বলব, এই রায়ে আমি কষ্ট পাচ্ছি।”
এদিন সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করেন তিন বিচারপতি। বেলা সাড়ে ১২টার পর ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। ট্রাইব্যুনাল থেকে এ রায়ের মূল আদেশ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
প্রারম্ভিক বক্তব্যে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এ মামলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, মোট ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায় সাজানো হয়েছে ছয়টি ভাগে।
শুরুতে বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী ট্রাইব্যুনালের জুরিসডিকশন, অভিযোগগুলো এবং রোম স্ট্যাটিউট অনুযায়ী সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির গ্রাউন্ড পড়ে শোনান।
এরপর আদালতে উত্থাপিত তথ্য উপাত্তগুলো পড়ে শোনান বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।
সবশেষে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
