বেদনা ও ভালোবাসায় ভরা এক আবেগঘন দৃশ্য দেখা গেছে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার গল্লাই আবেদা নূর উচ্চ বিদ্যালয়ে। হেমন্তের রোদেলা দুপুরে ফুলে সজ্জিত গাড়িতে প্রিয় প্রধান শিক্ষককে বাড়ি পৌঁছে দেন তারই প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা—যেন এক অনন্য ভালোবাসার সাক্ষ্য।
বিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর কবির ১৪ অক্টোবর অবসরে যান। শনিবার (৮ নভেম্বর) বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে বিদায় জানানো হয়।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানের পরিবেশ ছিল গভীর আবেগে ভরা।
অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীরা ফুলে মোড়ানো গাড়িতে প্রিয় শিক্ষককে তার বাড়ি পৌঁছে দেয়। বিদ্যালয়ের আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও বিদায়ের বেদনা।
শিক্ষাক্ষেত্রে ৩১ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবনের অবসান ঘটান নিবেদিতপ্রাণ এই শিক্ষক।
১৯৯৮ সালে তিনি গল্লাই আবেদা নূর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এর আগে মতলব আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।
সহকর্মীরা বলেন, আলমগীর স্যার কেবল একজন শিক্ষক নন, তিনি ছিলেন একজন প্রেরণাদাতা ও দিকনির্দেশক। তিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেছেন।
অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায়ী শিক্ষক আলমগীর কবির বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের কখনো শুধু ছাত্র হিসেবে দেখিনি বরং নিজের সন্তানের মতোই যত্ন নিয়েছি, শাসন করেছি। সহকর্মীরাও আমার পরিবারের সদস্যের মতো ছিলেন। আজ তাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পেয়ে মনে হচ্ছে আমার শিক্ষকতা জীবন সার্থক হয়েছে।’
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নবাবপুর আহসান উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান বিএসসি বিএড, গল্লাই আবেদা নূর ফাউন্ডেশনের রেক্টর শাহাজাহান সাজু, গল্লাই আবেদা নূর বিএমআই কলেজের অধ্যক্ষ ড. আমীর খসরু, প্রফেসর আবুল ফয়েজ আবদুল্লাহ এবং নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. শাহজাহান।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন আবদুর রব মেম্বার, শিক্ষক সাহাদাত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আবু তাহের, আবেদা নূর ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সাঈদুর রহমান, বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মো. আলী আশরাফ, মো. নূরে আলম, মো. হাবিবুর রহমান, এবিএম রুহুল আমীন, মুছা কালিমুল্লাহ, আহাম্মদ শরীফ, বোরহানউদ্দিন মামুন, মো. শরিফুল ইসলাম মুন্সী, নেওয়াজ শরীফ, নবীর হোসেন, রাসেল আহম্মেদ, মিজানুর রহমান, কামরুল হাসান, সালমান আজিজসহ অনেকে।
বিদায় অনুষ্ঠানটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়—ছিল এক প্রিয় শিক্ষকের প্রতি অগণিত শিক্ষার্থীর ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।
