সিলেটের ইতিহাসে প্রথম ও সবচেয়ে বৃহত্তম “ওয়েডিং কার্নিভাল এন্ড এক্সপো ২০২৫” তিনদিনব্যাপী আয়োজনের মধ্য দিয়ে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে শনিবার (১ নভেম্বর)। বর্ণাঢ্য আয়োজন, আলোক-সাজসজ্জা, সঙ্গীত ও ফ্যাশনের এক মনোমুগ্ধকর মিলনমেলায় রূপ নেয় গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল এন্ড রিসোর্ট প্রাঙ্গণ। রঙ, আলো ও সংগীতের জাদুতে তিন দিন ধরে গ্রান্ড সিলেট পরিণত হয়েছিল এক রূপকথার বিয়ের সাজে। গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে আয়োজিত “ওয়েডিং কার্নিভাল এন্ড এক্সপো ২০২৫” শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, বরং বিয়ের সংস্কৃতি, ফ্যাশন ও সৃজনশীলতার এক প্রাণবন্ত উৎসবে রূপ নেয়।
বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত চলা এই তিনদিনব্যাপী আয়োজনে দর্শনার্থীদের ঢল নামে গ্র্যান্ড সিলেট প্রাঙ্গণে। এক ছাদের নিচে সাজানো হয় বিয়ের সব প্রয়োজনীয় আয়োজন-পোশাক, গহনা, ফুল, ফটোগ্রাফি, ইভেন্ট প্ল্যানিং থেকে শুরু করে হানিমুন প্যাকেজ পর্যন্ত।
গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের প্রতিটি কোণ সাজানো হয়েছিল রাজকীয় বিয়ের সাজে। প্রবেশদ্বারজুড়ে ছিল ফুলের টানেল ও ঝুলন্ত লাইটের মনোরম সজ্জা। ভিতরে ক্রিস্টাল ঝাড়বাতি, ফুলেল আর্চ ও রঙিন আলোকসজ্জায় হোটেল প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে বিয়ের স্বপ্নরাজ্য। দর্শক সাবরিনা রহমান বলেন, “ভেতরে ঢুকেই মনে হয়েছে আমি যেন কোনো সিনেমার সেটে এসেছি! এত সুন্দর করে সাজানো পরিবেশ আগে কখনো দেখিনি।” এক্সপোতে অংশ নেয় শতাধিক ওয়েডিং সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ড, ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। নবদম্পতি, পরিবার ও পরিকল্পনাকারীরা এক জায়গায় পেয়ে যান বিয়ের সম্পূর্ণ আয়োজনের সমাধান।
ক্রেতা নুসরাত তানজিম বলেন, “আমি আমার বিয়ের কেনাকাটার জন্য এখানে এসেছি। পোশাক থেকে গহনা, ডেকোরেশন থেকে ফটোগ্রাফি- সবকিছুই দারুণভাবে সাজানো। এক জায়গায় এত সেবা পাওয়া সত্যিই স্বপ্নের মতো।”
এক্সপোর দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ছিল ফ্যাশন ও সংগীতের মহোৎসব। সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় ঝলমলে র্যাম্প শো, যেখানে দেশের শীর্ষ ডিজাইনাররা উপস্থাপন করেন তাদের নতুন ব্রাইডাল কালেকশন। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে সাজানো পোশাকে মুগ্ধ হয় দর্শকরা।
লাইভ মিউজিক, নৃত্য পরিবেশনা ও আলো-ঝলমলে আয়োজন পুরো প্রাঙ্গণকে পরিণত করে আনন্দমুখর এক উৎসবে। দর্শক মেহজাবিন চৌধুরী বলেন, “এমন আন্তর্জাতিক মানের ওয়েডিং আয়োজন সিলেটে হবে- তা ভাবিনি। এই ইভেন্ট সিলেটের ভাবমূর্তিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।”
দেশ-বিদেশ থেকে আগত অতিথিরাও প্রশংসা করেন আয়োজকদের উদ্যোগের। যুক্তরাজ্য প্রবাসী নুর মোহাম্মদ বলেন, “দেশে এসে এমন মানসম্মত আয়োজন দেখে গর্ব লাগছে। এখানে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার যে মিশেল দেখেছি, তা এক কথায় অসাধারণ।” গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের চেয়ারম্যান আলী মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, “আমাদের লক্ষ্য সিলেটকে বাংলাদেশের ওয়েডিং ডেস্টিনেশন হিসেবে গড়ে তোলা। এই আয়োজন তরুণ উদ্যোক্তা ও সৃজনশীল পেশাজীবীদের জন্য নতুন সুযোগের দিগন্ত খুলে দেবে।” দর্শক আরিফ চৌধুরী বলেন, “গ্র্যান্ড সিলেটকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, এটি কোনো আন্তর্জাতিক ওয়েডিং ভেন্যুর চেয়ে কম নয়।”
তিনদিনের এই উৎসবের মধ্য দিয়ে সিলেট প্রমাণ করেছে-দেশের বিয়ের আয়োজন এখন আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে গেছে। “ওয়েডিং কার্নিভাল এন্ড এক্সপো ২০২৫” শুধু একটি ইভেন্ট নয়, বরং এটি সিলেটের সৃজনশীলতা, ফ্যাশন, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
