BD SYLHET NEWS
সিলেটমঙ্গলবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৩:৫৮
আজকের সর্বশেষ সবখবর

যে পাঁচ অভিযোগে শেখ হাসিনার মামলার রায় আজ


নভেম্বর ১৭, ২০২৫ ১২:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আজ ঘোষণা করা হবে। এ মামলার রায় দেবেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পাঁচটি অভিযোগে করা এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। গতবছর ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই প্রথম কোনো মামলার বিচারের রায় হবে।

গত ১০ জুলাই সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবিলিটিসহ পাঁচ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। গত ২ জুলাই আদালত অবমাননার দায়ে শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন একই ট্রাইব্যুনাল।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের। অভ্যুত্থানের সময় গত বছর ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত তার সরকারের কঠোর দমননীতিতে বহু মানুষ হতাহত হন। এর মধ্যে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যার উস্কানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে তিন আসামির বিরুদ্ধে।

অভিযোগের পক্ষে আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ সংক্রান্ত শেখ হাসিনার অডিও টেপ এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ দাখিল করে প্রসিকিউশন। গত ১ জুন প্রসিকিউশনের অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগ আমলে নিয়ে চার্জ গঠন করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এগুলো হলো–

প্রথম অভিযোগ: গত বছর ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শেখ হাসিনার ‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্যের পর আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ‘প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায়’ তাদের অধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সশস্ত্র ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা’ ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। এরই অংশ হিসেবে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার অপরাধ করতে আসামিদের বিরুদ্ধে প্ররোচনা, উস্কানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

দ্বিতীয় অভিযোগ: শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ‘হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ’ দিয়েছেন। এ ছাড়া তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে নিয়ন্ত্রণাধীন ও অধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

তৃতীয় অভিযোগ: রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গত বছরের ১৬ জুলাই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নিরীহ-নিরস্ত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আবু সাঈদের ‘বুক লক্ষ্য করে বিনা উস্কানিতে একাধিক গুলি চালিয়ে’ তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আসামিরা জ্ঞাতসারে এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উস্কানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে।

চতুর্থ অভিযোগ: ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শাহরিয়ার খান আনাসসহ ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করে। এর মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিরা তাদের হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উস্কানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

পঞ্চম অভিযোগ: ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশের এলাকায় গত বছরের ৫ আগস্ট আন্দোলনরত ছয় শিক্ষার্থীকে তৎকালীন সরকারের পুলিশ সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে। তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃতদেহ ও একজনকে জীবিত এবং গুরুতর আহত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় হত্যা, নির্যাতন, মৃত ও জীবিত অবস্থায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে অমানবিক আচরণ করার অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উস্কানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

সাক্ষ্য দিলেন যারা: ঐতিহাসিক এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরে আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া সাক্ষ্য দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদরুদ্দীন উমর, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ মোট ৫৪ জন এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ২০ ধারায় কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধানও রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির দোষী সাব্যস্ত হওয়া বা নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার কারণ ট্র্যাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করতে হবে। ট্রাইব্যুনাল আইনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তার অপরাধের গুরুত্ব অনুপাতে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড বা অন্য যে কোনো শাস্তি দিতে পারবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানিয়েছেন, আসামির অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বা অপরাধের গভীরতা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল যে কোনো শাস্তি দিতে পারবেন। মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারেন, আমৃত্যু কারাদণ্ড দিতে পারেন। এর চেয়ে কম বিভিন্ন মেয়াদের সাজাও দিতে পারেন ট্রাইব্যুনাল।

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।