BD SYLHET NEWS
সিলেটবৃহস্পতিবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১১:২৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের আখড়া ছাতক বিউবো কার্যালয়


নভেম্বর ১৩, ২০২৫ ১২:১০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) কার্যালয়ে ঘুষবাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যুতের লাইন মেরামত, বিল সংশোধন, নতুন লাইন সংযোগ ও ট্রান্সফরমার পরিবর্তনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের ঘুষ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ২০২২ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদের যোগ দেওয়ার পর থেকেই ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ঘুষ সিন্ডিকেটটি। তারা নানা কৌশলে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে গ্রাহকদের থেকে ঘুষ আদায় করছেন।

উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গণেশপুরের বাসিন্দা জাহিদ হাসান মোহাম্মদ রুহেল জানান, বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের মামলায় গত ২৬ অক্টোবর আকস্মিকভাবে পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। অথচ তাঁর নামে কোনো বকেয়া বিল বা ওয়ারেন্ট ছিল না।

টিএ সুলতান নামের এক গ্রাহক জানান, তিনি একটি বিল মিটারের ১৮শত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন। তাঁকে ৩ হাজার ৯শ ইউনিটের বিল দিতে হয়েছে। কয়েক দফা বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে তিনি প্রতিকার পাননি। বাধ্য হয়ে প্রিপেইড মিটারের সংযোগ নিয়েছেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের হাসনাবাদ-ইলামেরগাঁও এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনে স্থানীয়দের থেকে ১ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। ঘুষের বাকি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা না দেওয়ায় প্রকল্পটি ইচ্ছাকৃতভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীদের ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও ফুটেজও এলাকাবাসীর কাছে রয়েছে।

সম্প্রতি পৌরসভা এলাকায় ট্রান্সমিটার পরিবর্তনের জন্য ৩ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আলী হোসেন নামে এক কর্মচারীর অপসারণ দাবি করে গত ১৯ অক্টোবর এলাকাবাসীর ব্যানারে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সিলেট পিডিবি প্রকল্প কার্যালয়ের অধীনে ছাতক উপজেলায় পুরাতন এলটি লাইন (লো-টেনশন লাইন) সংস্কারের নামে একটি প্রভাবশালী চক্র কয়েক বছর ধরে প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। এ বিষয়ে গত ১৭ মার্চ রাতে ছাতক সেনা ক্যাম্পের একটি টহল দল উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের দেওকাপন গ্রামে অভিযান চালিয়ে দুজনকে নগদ টাকাসহ আটক করে। পরদিন ১৮ মার্চ সকালে আটকদের আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে দেওকাপন গ্রামের আব্দুস ছত্তারের ছেলে সাইদুল হক বাদী হয়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাতক থানায় একটি মামলা রুজু করেন। ওই মামলায় প্রায় ৫ কোটি টাকা চাঁদা আদায় ও প্রতারণার অভিযোগে ৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে থানা পুলিশ।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে বক্তব্য নিতে রোববার দুপুরে অফিসে গেলে, প্রকৌশলী তাদের কোনো বক্তব্য না দিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পরে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে সাতজনের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

গত ৯ নভেম্বর ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে ছাতক পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ফকিরটিলা মহল্লার বাসিন্দা এসএম ফারুক লিখেছেন, ২০২৪ সালে তাঁর বাসার কাছে বিদ্যুৎ-এর মেইন লাইন মেরামতের বিষয়ে কিছু ঝামেলা হয়। এ বিষয়ে ছাতক বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি মিথ্যা মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলে তাঁর কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে তৎকালীন সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসানের কাছে ২ লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি আপস নিষ্পত্তি করেন। ছাতক বিউবো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে নানা অভিযোগকে কেন্দ্র করে উপজেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) আব্দুল মজিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।

বিউবোর সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদির বলেন, ছাতক উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।