দিন দিন কায়িক শ্রমের পরিমাণ কমছে, বাড়ছে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা। ফলে লিভারের রোগের প্রকোপ বেশি দেখা দিচ্ছে অল্প বয়সিদের মাঝে। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের ২০১৮ সালের তথ্যানুসারে জানা যায়, সে দেশের ৪৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন সে বছর। ২০২৩ সালের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ২০ লাখ মানুষ কেবল লিভারের অসুখেই প্রাণ হারিয়েছিলেন।
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে এ সমস্যা আরও জাঁকিয়ে বসেছে নতুন প্রজন্মের মধ্যে। উপরন্তু নিজেদের অজান্তেই এসব ক্ষতিকারক খাবারের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন অল্প বয়সিরা। প্রক্রিয়াজাত একাধিক খাবারের মধ্যে এর উপস্থিতি থাকে। কিন্তু শেষে জানতে পারেন না কেউ।
এ বিষয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, সেই বিশেষ খাবার নিয়ে। তা হলো— হাই ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ (এইচএফসিএস)। তিনি বলেন, ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপকে অবশ্যই লিভারের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক খাবার বলা যেতে পারে।
অরিন্দম বিশ্বাস আরও বলেন, গ্লুকোজ যতটা সহজে লিভার হজম করে নিতে পারে, ফ্রুক্টোজের ক্ষেত্রে তা পারে না। আর তাই ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ খুব দ্রুত লিভারে গিয়ে ফ্যাটে পরিণত হয়ে যায়। এর পাশাপাশি ইউরিক অ্যাসিডও বৃদ্ধি পায়। ফলে লিভারের অসুখের ঝুঁকি বেড়ে যায়। লোকে না বুঝেই প্রতিদিন এটা খেয়ে থাকেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে— হাই ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ কী?
ভুট্টার স্টার্চ থেকে বানানো এক প্রকার সিরাপ এটি। এই তরল ব্যবহার করে খাবারে মিষ্টি স্বাদ আনা যায়। এটিকে প্রক্রিয়া করে এর কিছু গ্লুকোজকে ফ্রুক্টোজে রূপান্তরিত করা হয়। প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয়তে তা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এর অতিরিক্ত সেবন স্থূলত্ব, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং প্রদাহের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে।
আর নরম পানীয়, বেক্ড খাবার, সোডাজাতীয় পানীয়, মিষ্টি মেশানো ইয়োগার্ট, কেচআপ, এনার্জি ড্রিঙ্ক, কুকি, ক্যান্ডি— এমনই কিছু প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকিয়ে থাকে ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ। আর লিভারের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকারক খাবারের তালিকার শীর্ষে থাকতে পারে এটি। এর অজান্তেই সেটি সেবন করে চলেছেন অল্প বয়সিরা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে— নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজে বড় ভূমিকা রয়েছে হাই ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপের। আর কখনো কখনো আবার ফ্যাটে পরিণত করতে না পারলে ফ্রুক্টোজ ট্রাইগ্লিসারাইডে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া খাবার খাওয়ার পর ইনসুলিন শরীরে পৌঁছে মস্তিষ্ককে সংকেত দেয়, আর খাওয়া যাবে না। কিন্তু ফ্রুক্টোজের ক্ষেত্রে লেপটিন তৈরি হয় না বলে সেই সংকেত টুকু পায় না মস্তিষ্ক। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে শরীর।
