বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক জোটে যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, জামায়াত স্বাধীনভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে, তবে “নির্বাচনী সমঝোতা”র মাধ্যমে দেশপ্রেমিক ও প্রতিশ্রুতিশীল ব্যক্তিবর্গ ও দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে এগোবে।
বুধবার সকালে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। তৃতীয়বারের মতো দলের আমির নির্বাচিত হওয়ার পর সিলেট ফিরে বিমানবন্দরে দলের নেতাকর্মীদের উষ্ণ অভ্যর্থনায় সিক্ত হন তিনি।
তিনি বলেন,“আমরা কোনো জোট করার সিদ্ধান্ত নিইনি, জোট করবও না। আমরা নির্বাচনী সমঝোতা করব। শুধু ইসলামী দল নয়, যারা দেশপ্রেমিক ও প্রতিশ্রুতিশীল, তারাও এতে যুক্ত হচ্ছেন। আগামীতে আরও অনেক দল এই সমঝোতায় যুক্ত হবে। আমরা সবাইকে নিয়ে দেশ গড়তে চাই।”
জামায়াত আমির বলেন, “গণভোট আগে না হলে জাতীয় নির্বাচন কোন ভিত্তিতে হবে? আমরা চাই গণভোট আগে অনুষ্ঠিত হোক এবং জুলাই সনদ আইনিভিত্তি পাক।”
এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল—“জামায়াত সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে চায়, এখানে ‘সবাই’ বলতে কি আওয়ামী লীগকেও বোঝায়?” জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আওয়ামী লীগ নিজেরাই তো নির্বাচন চায়নি। আপনি কি তাদের উপর জোর করে নির্বাচন চাপিয়ে দেবেন? তারা নির্বাচনে বিশ্বাসী—এটা তারা কখনো প্রমাণ করতে পারেনি। যেটা তারা চায় না, সেটা তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া জুলুম ছাড়া কিছু নয়।”
জনগণের উদ্দেশ্যে জামায়াত আমির বলেন, “অনেক ত্যাগ ও কোরবানি দিয়ে দেশে পরিবর্তন এসেছে। গত তিনটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। দুঃশাসনের কারণে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। তাই দুঃশাসনের যত কারণ ছিল, সব দূর করতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ দুর্নীতি। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই—দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন। আমি দুর্নীতি করব না, কাউকে করতে দেব না—এই অঙ্গীকারই দেশকে এগিয়ে নেবে ইনশাআল্লাহ।”
পি আর পদ্ধতি ও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের ফর্মুলা হচ্ছে—একাধিক দল থাকবে, একাধিক আদর্শ থাকবে। সবাই তাদের কর্মসূচি ও দাবি নিয়ে জনগণের সামনে আসবে। আমাদের পি আর পদ্ধতির দাবি সবচেয়ে যৌক্তিক। জনগণ যদি মনে করে ভবিষ্যতে যেন আর কোনো ফ্যাসিবাদ না ফিরে আসে, তবে পি আর পদ্ধতি বাস্তবায়ন জরুরি। আমরা সেই দাবিতে অটল আছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। নির্বাচন দেরি হলে নানা ধরনের আশঙ্কা তৈরি হবে, যা দেশের রাজনীতির জন্য শুভ নয়।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সিলেট-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিলেট-২ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যাপক আবদুল হান্নান, সিলেট-৩ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমেদ, সিলেট-৪ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সিলেট-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হাফিজ মাওলানা আনোয়ার হোসাইন খান, সুনামগঞ্জ-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা আবদুস সালাম আল মাদানি, হবিগঞ্জ-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ শাহজাহান আলী, মৌলভীবাজার- ৪ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সিলেট মহানগরী জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবদুর রব, সিলেট-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমানের নির্বাচনী পরিচালক হাফিজ মাওলানা আবদুল হাই হারুন, সিলেট মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির হাফিজ মাওলানা মিফতাহ উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
মতবিনিময় শেষে পরে তাকে নিয়ে সহস্রাধিক মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় নগরে নিয়ে আসা হয়। এসময় চার কিলোমিটার-জুড়ে রাস্তার দু’পাশে শত শত মানুষ হাত নেড়ে তাকে স্বাগত জানান। তিনি বিদেশে সফর করে দেশে ফিরেই সিলেটে দু’দিনের সফরে এসেছেন।
