BD SYLHET NEWS
সিলেটবুধবার, ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১২:৪২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

উন্নয়ন না রাজনীতি? সিলেটে সাবেক মেয়র আরিফের আন্দোলন নিয়ে বিতর্ক


নভেম্বর ৩, ২০২৫ ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

বিডি সিলেট নিজস্ব প্রতিবেদক:: সিলেটের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী সম্প্রতি ‘সিলেটের উন্নয়ন বঞ্চনা’ ইস্যুতে নতুন আন্দোলন শুরু করেছেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও সমাবেশের মাধ্যমে তিনি দাবি করছেন, প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে সিলেটকে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করছে। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে—এটি কি সত্যিই উন্নয়নের দাবি, নাকি আসন্ন নির্বাচনে নমিনেশন নিশ্চিত করার রাজনৈতিক কৌশল?

নির্বাচন এখন প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস দূরে। এই মুহূর্তে প্রশাসনের কোনো বড় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ বা অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচনকালীন বিধি অনুযায়ী, প্রশাসন এখন কার্যত ‘কেয়ারটেকার মোডে’—অর্থাৎ বড় কোনো নীতিগত বা আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন সিলেটের উন্নয়ন দাবিতে আন্দোলন করা বাস্তবসম্মত নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক প্রদর্শনী।

দশ বছর ছিলেন মেয়র, তখন উন্নয়ন আন্দোলন কোথায় ছিল?

আরিফুল হক চৌধুরী দুই দফায় মোট ১০ বছর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মেয়াদকালে কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও নাগরিক সমস্যার বড় অংশ অমীমাংসিতই থেকে যায়, রাস্তা ঘাট—যানজট, ড্রেনেজ, পানি সরবরাহ, এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অগ্রগতি খুবই সীমিত ছিল বলে অনেক নাগরিক মনে করেন।

এখন সেই সাবেক মেয়রই উন্নয়নের বঞ্চনা নিয়ে আন্দোলনে নামায় অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—মেয়র থাকাকালে কেন তিনি এই একই ইস্যুতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নামেননি? স্থানীয় রাজনীতিকদের মতে, “আরিফ সাহেব এখন বুঝতে পারছেন যে কেন্দ্রীয় মনোনয়নের দৌড়ে তিনি পিছিয়ে আছেন। তাই শহরের জনগণকে হাতিয়ার করে নিজেকে জনপ্রিয় দেখানোর চেষ্টা করছেন।”

কেন্দ্রীয় মনোনয়নই মূল টার্গেট

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়েছে কেন্দ্রে। এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন নেতারা নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও এর ব্যতিক্রম নন। তার সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলো—মানববন্ধন, সমাবেশ, প্রতিবাদ সভা—সবগুলোই কেন্দ্রে তার “জনপ্রিয়তা” তুলে ধরার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

মুক্তাদিরের জনপ্রিয়তা বাড়ছে

অন্যদিকে বিএনপির আরেক সম্ভাব্য সিলেট – ১ আসনের প্রার্থী খন্দকার মুক্তাদির প্রতিদিন বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ব্যস্ত। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংগঠনিক সভায় তার উপস্থিতি বাড়ছে, এবং তিনি ধীরে ধীরে সিলেটের রাজনীতিতে একটি শক্ত অবস্থান গড়ে তুলছেন। ফলে অনেকেই মনে করছেন, কেন্দ্রে তার প্রভাব এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “মুক্তাদির মাঠে সক্রিয় থেকে জনগণের সংস্পর্শে রয়েছেন। অন্যদিকে আরিফুল হক দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর হঠাৎ আন্দোলনে নেমে ‘জনপ্রিয়তার ঢেউ’ তুলতে চাচ্ছেন। এটি স্বাভাবিক রাজনীতির অংশ, তবে উদ্দেশ্যটা স্পষ্টতই নির্বাচনী।”

সিলেটবাসীর প্রত্যাশা: বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ

সিলেটের প্রায় এক কোটি মানুষ উন্নয়ন চায়—এটি নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। কিন্তু সেই উন্নয়ন দাবি জানাতে হলে তা হতে হবে যৌক্তিক সময়ে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে। এখন যখন প্রশাসনের হাতে বড় কোনো উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার ক্ষমতা নেই, তখন এই ধরনের আন্দোলনকে অনেকেই “সিলেটবাসীর সঙ্গে তামাশা” হিসেবে দেখছেন।

একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা উন্নয়ন চাই, কিন্তু সেটা বাস্তবসম্মতভাবে চাই। নির্বাচন সামনে রেখে যে প্রশাসন কিছু করতে পারবে না, তাদের সামনে আন্দোলন করার মানে কী? এটা তো আসলে রাজনীতি, উন্নয়ন নয়।”

সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নতুন আন্দোলন সিলেটের রাজনীতিতে এক নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে। এটি সত্যিকার অর্থে উন্নয়নের দাবি, নাকি রাজনৈতিক কৌশল—তা সময়ই বলে দেবে। তবে আপাতত মনে হচ্ছে, সিলেটের উন্নয়ন এখন রাজনীতির একটি হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, যেখানে জনগণের প্রকৃত স্বার্থ নয়, বরং মনোনয়নের লড়াইই মুখ্য হয়ে উঠেছে।

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।