BD SYLHET NEWS
সিলেটবৃহস্পতিবার, ৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ১১:৫৭
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মাছের ভান্ডার খ্যাত সুনামগঞ্জ এখন মাছশূন্য


নভেম্বর ২, ২০২৫ ১:২৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

স্টাফ রিপোর্টার, সুনামগঞ্জ : হাওরের অঞ্চল সুনামগঞ্জ জেলা মাছের ভান্ডার বলা হলেও এখন মাছ শূন্য। তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর, দিরাই, শাল্লা সহ বিভিন্ন উপজেলার মাছ পাওয়া গেলেও এবার তা হয়নি।

আবহাওয়া আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতিতে বদলে সময় মতো হাওরে পানি না আসা, বিল জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা এবং ক্ষতিকর জালে মাছ শিকারের কারণে হাওরে দেশীয় প্রজাতির মাছের আকাল চলছে বলে জানিয়েছেন হাওর পাড়ে বাসিন্দাগন ও জেলেরা।

তবে হাওর পাড়ের সচেতন মহল বলছেন, আবহাওয়া আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হাওর ও নদীর রুপের বদল দেখেছেন জেলেরা। যে হাওর ও নদীতে আগে জাল ফেললে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিলত এখন সেখানে কেবল শূন্যতা। তবে দেশীয় মাছ রক্ষায় সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিলে আবারও মাছ কেন্দ্রিক চাঙ্গা হবে হাওরের অর্থনীতি এমনটাই মনে করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলার ৩,৭৪৭.১৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জীবন ও অর্থনীতি ধান মাছ সবজি এই তিনটি ফসলকে ঘিরে। ৬ মাস বষা মৌসুম থাকে তখন হাওর এলাকার মানুষদের প্রধান আয়ের উৎস থাকে মাছ উৎপাদনকে ঘিরে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এ জেলায় দেশি মাছ ও চাষের মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় জেলা শহরের হাট বাজার গুলো থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রামীণ বাজারে দেখা দিয়েছে মাছের সংকট।

জানা গেছে, জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার ৭৪৩ জন। জেলায় মোট মাছের চাহিদা ৫৬ হাজার ৩৭২ মে.টন। জেলার ১৩৭টি হাওর, ২৬টি নদী এবং ২০,৭৬৯টি পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে ২০,২৪৯টি পুকুরে নিয়মিত মাছ চাষ হয়। এমনকি চলতি অর্থ বছরে এই জেলা থেকে প্রায় ১,৪০০ কোটি টাকার মাছ উৎপাদনের কথা রয়েছে যদিও সেটি গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম।

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থ বছরে এই জেলা থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৫১৭ মে.টন, ২২-২৩ অর্থ বছরে ১ লাখ ১২ হাজার ৭৪ মে.টন ও ২৩-২৪ অর্থ বছরে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৩০ মে.টন মাছের উৎপাদন হয়েছে। যেখানে মোট ১২৬ প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করা হয়। মূলত কাগজে কলমে ভাটির এই জেলায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি বাড়িয়ে দেখালেও বাস্তব চিত্র পুরো ভিন্ন।

টাংগুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা শফিক আহমেদ (৪৫) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন হাওর ও নদীতে জাল ফেলে মাছ শিকার করেন। এক সময় জলাশয়ে জাল ফেললেই রুই, চিতল,টেংরা সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা পড়ত। পরে সেই মাছ স্থানীয় হাট বাজারে সর্বোচ্চ ৩শ থেকে ৪ শ টাকা বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগান দিতেন কোনো রখমে। এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাল ফেলা হলেও মাছের দেখা নেই। যার ফলে সংসার চলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমার মত হাওর পাড়ের জেলেদের। পানি কমে গেলে বিল শুকিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করার দাবী জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ পৌর ওয়েজখালী মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রতিদিন ভোর সকালে জেলার বিল ও জলাশয় থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দুপুর পর্যন্ত আনা হত। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মাছ কেনা-বেঁচা হলেও এখন সেখানে কেবলেই নিরবতা।

মাছ আড়ৎদাররা জানান, বাজারে ক্রেতারা এসে চাহিদা অনুযায়ী মাছ পাচ্ছেন না। এই বছর মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। মাছ না থাকায় আমর যারা ব্যবসায়ীরা আছি তারাও বিপাকে পড়েছি।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা খরচার হাওরের জেলেরা সমিরণ দাস,সুবল দাস সহ অনেকেই বলছেন, জেলার বড় বড় বিলগুলো শুকিয়ে মাছ আহরণ বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ,ক্ষতিকারক জাল ব্যবহার যেখানে উৎপাদন হয় সেখানে থেকে জাল রপ্তানি বন্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিলে জেলায় আবারও মাছ উৎপাদন বাড়বে। না হলে কিছুই হবে না আর আমরাও মাছ পাবো না। জীবন জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ডা.আল মিনান নুর জানান,মাছের উৎপাদন বাড়াতে হাওর ও নদীতে আমরা মৎস্য আইন বাস্তবায়ন করব। বিল- নার্সারী স্থাপন করব ও দেশীয় মাছের পোনা উমুক্ত করবো।

সুনামগঞ্জে পরিদর্শনে এসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছিলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় আভায় শ্রমের পরিকল্পনা করার পাশাপাশি নিষিদ্ধ জাল যেখান থেকে আমদানি রপ্তানি করা হয় সেখানেও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।