রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন
বিডি সিলেট ডেস্ক::- ভ্যান গাড়িতে কয়েক তরুণের মরদেহ স্তূপ করে রাখা। সেগুলো নীল জমিনে লাল-সাদা ছাপা বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা। পুরো লুকানো সম্ভব হয়নি। ভ্যান থেকে ঝুলছিল কারও রক্তাক্ত হাত-পা। নিথর দেহে কারও মাথা ঝুলে ছিল। বীভৎস, নৃশংসতার সাক্ষী হয়েছিল ঝুলে থাকা হাত-মাথা।
পুলিশের বুলেটপ্রুপ জ্যাকেট-হেমলেট পরা দুই ব্যক্তি আরও এক তরুণের নিথর দেহ ছুড়ে মারছিলেন থেমে থাকা সেই ভ্যানে। প্রথম দফায় ব্যর্থ হন তারা, পরের বারের চেষ্টায় সেই মরদেহ ছুড়ে মারা হয় আগে থেকে স্তূপ করা লাশের ওপর। এরপর তা ধুলা ভরা-ছেঁড়া ব্যানারে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা হয়। ভ্যানটির আশপাশে ঘিরে ছিলেন অস্ত্র হাতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য। গত শুক্রবার ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে গুলি করে হত্যার পর লাশ নিয়ে পুলিশের এমন নিষ্ঠুরতা, তা সবাই নিশ্চিত ছিল। কিন্তু এই বীভৎসতা কোথায়? তা নিশ্চিত ছিলেন না কেউ। তবে ভিডিওতে দেখা যাওয়া দেয়ালে সাঁটানো পোস্টার আর বালুর বস্তার স্তূপ দেখে গতকাল শনিবার নিশ্চিত হওয়া যায়, এমন নৃশংতার ভিডিও ঢাকার অদূরে আশুলিয়া থানার সামনে ঘটে গত ৫ আগস্ট। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা তা নিশ্চিত করেছেন ভিডিওতে দেখা যাওয়া পুলিশের এক পরিদর্শককে দেখে। ওই পরিদর্শকের নাম আরাফাত হোসেন। তিনি ঢাকা জেলা গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগে কর্মরত। ফ্যাক্ট চেকিং রিউমার স্ক্যানিংয়েও ধরা পড়ে ভিডিওটি আশুলিয়া থানার সামনে। স্থানীয়রা বলছেন, ৫ আগস্ট বিকেলে ঘটে এমন ঘটনা।
ঢাকা জেলা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে আশুলিয়া থানার ওসি এএফএম সায়েদ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। যদিও ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে তাকে দেখা যায়নি।
ভিডিওর ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডে একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় যুবলীগের ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের। সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ঘটনাস্থল আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের পেছনের সড়ক দিয়ে থানা রোড অতিক্রম করে এসবি অফিসের দিকে যাওয়ার সময় ডান পাশের দেয়ালটি হুবহু ভিডিওর সঙ্গে মিলে যায়। সেই পোস্টারটি এখনো দেয়ালে রয়েছে। মহাসড়ক থেকে থানার দিকে যেতে এসবি অফিসের দিকে চৌরাস্তায় ওই নৃশংস ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সাভার ও আশুলিয়ায় গত ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৭৫ জন। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন চার শতাধিক মানুষ। যাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মঈদ গতকাল বলেন, ভিডিওটি তারা দেখেছেন। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যদের শনাক্তসহ পুরো ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিবি পরিদর্শক ঘটনার পর থেকে পলাতক। তা ছাড়া অন্যদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সূত্র – কালবেলা