BD SYLHET NEWS
সিলেটসোমবার, ২৪শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৮:০০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ৪ জনের ৩ জনই বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে


আগস্ট ১, ২০২৪ ১০:১৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিডিসিলেট ডেস্ক : কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার চার-চারটি পরিবারের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে তিনটি পরিবারই একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আজ তারা দিশেহারা।

নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডে দশ বছরের শিশু হোসাইন ও ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের গুলিতে দেবিদ্বারের আরও তিনজনসহ চারজন নিহত হয়েছে বলে তাদের পরিবার সূত্রে জানা যায়। এই চারজনের মৃত্যুতে তাদের পরিবারসহ পুরো এলাকায় চলছে শোকের মাতম। তারা সবাই নিম্নআয়ের মানুষ।

নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রসুলপুর গ্রামের সৈয়দ আবুল কায়েসের একমাত্র ছেলে মো. নাজমুল হাসান (২২) ঢাকার মধ্য বাড্ডায় একটি প্রাইভেট হসপিটালে চাকরি করতেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন আফতাবনগর এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। গত ১৯ জুলাই জুমার নামাজ ও খাওয়া দাওয়া শেষে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বাহির হয়ে বাড্ডা এলাকায় পুলিশের গুলিতে মারা যায়। পরদিন শনিবার তার লাশ মাদারীপুরে মামার বাড়িতে দাফন করা হয়। একমাত্র ছেলেকে হাড়িয়ে তার বাবা মা আজ পাগলপারা হয়ে গেছেন।

অপরদিকে উপজেলার বড়শালঘর ইউনিয়নের বড়শালঘর গ্রামের মো. হানিফ মিয়ার একমাত্র ছেলে মো. সাগর মিয়া (১৯) ভ্যানে করে সবজি ও কলা বিক্রি করতেন। বাবা মায়ের সঙ্গে থাকতেন ঢাকার মিরপুর এক নম্বর এলাকায়। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার প্রতিদিনের মতো ভ্যানে করে কাঁচামাল নিয়ে মিরপুর-১০ নম্বরে যান। সেখানে সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হয় সাগর মিয়া। পরে স্থানীয়রা তাকে মিরপুরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে গেলে রাতে তার মৃত্যু হয়।

পরে ছেলের সন্ধানে হানিফ মিয়া বাহির হলে জানতে পারেন তার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছেন। হানিফ মিয়া ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখেন তার ছেলের লাশ হাসপাতালের মর্গে ফ্রিজিং করে রাখা হয়েছে। ছেলের লাশ দেখে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন হানিফ মিয়া। পরদিন শনিবার সকালে তার মরদেহ দেবিদ্বারে নিয়ে আসে। দুপুরে জানাজা শেষে বাড়ির পাশে একটি কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

অপর ঘটনায় উপজেলার ভানী ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. কাদির হোসেন সোহাগ (২৪) পাঠাও নামের একটি কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিতে ডেলিভারি ম্যান হিসেবে চাকরি করতেন। থাকতেন ঢাকার গোপীবাগ এলাকার একটি মেসে। গত ২০ জুলাই সন্ধ্যা ৭টায় মেসের বন্ধুদের সঙ্গে নাস্তা খাওয়ার জন্য বাহির হয়। রাত ৮টায় সংঘর্ষ শুরু হলে একটি গুলি এসে সোহাগের বুকে লাগে। বন্ধুরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহাগ মারা যায়।

উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নের বেতরা গ্রামের মো. মানিক মিয়ার দশ বছরের একমাত্র শিশু ছেলে মো. হোসাইন মিয়া বাবা মায়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায়। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার ও পরিবারের সচ্ছলতা ফিরাতে বাবার সঙ্গে বিভিন্ন বাসে বাসে চকলেট, পপকর্ন, আচার বিক্রি করতো হোসাইন মিয়া।

গত ২০ জুলাই শনিবার বিকালে ভাত খেয়ে বাসা থেকে বাহির হয় হোসাইন। পরে চিটাগাং রোড এলাকায় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হোসাইনের বুকের ডান পাশে গুলি লেগে বাম পাশ দিয়ে বাহির হয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই হোসাইন মারা যায়। তারপরও শিশু হোসাইনকে বাঁচানোর চেষ্টায় স্থানীয়রা ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যায়।

রাত ৯টার দিকে হোসাইনের বাবা মানিক মিয়া জানতে পারেন তার ছেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। পরে সেখানে গিয়ে মর্গে ছেলের লাশ দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মানিক মিয়া। পরের দিন রোববার রাতে মানিক মিয়ার কাছে ছেলে লাশ হস্তান্তর করা হলে রাত ৩টায় গ্রামের বাড়ি উপজেলার বেতরা গ্রামে এনে দাফন করা হয়।

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেবিদ্বারের একটি শিশু ও তিনজন যুবকের মৃত্যুতে তাদের পরিবারসহ পুরো উপজেলা শোকে মাতম হয়ে আছে। সুত্র যুগান্তর

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।