শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন
বিডি সিলেট ডেস্ক:: দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জননেতা মকসুদ হোসেন এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত ৫ মে রবিবার রাত ৯টায় হোল্ডিং ট্যাক্স সহ নাগরিক দুর্ভোগ নিরসনের লক্ষ্যে ৭ দফা প্রস্তাবনা নিয়ে নগর ভবনের কনফারেন্স হলে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সাথে মতবিনিময় মিলিত হন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি ইকবাল হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ সমাজসেবক নেছারুল হক চৌধুরী বুস্তান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুন রশীদ এডভোকেট, সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ অরুণ কুমার দেব, সিনিয়র সদস্য সরোজ ভট্টাচার্য্য, যুব ফোরামের সভাপতি ইমাম হোসেন প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় মেয়র মহোদয়ের হাতে লিখিত প্রস্তাবনা পেশ করেন ফেরামের নেতৃবৃন্দ। ৭ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে- বর্তমানে আরোপিত হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর কার্যক্রমে নগরবাসীর মধ্যে চাপা উত্তেজান বিরাজ করছে। এটি নিরসনে বৈসম্যহীন কর আরোপ চায় নগরবাসী। বিশেষ করে দেশপ্রেমিক নিঃস্বার্থ ব্যক্তি ও গণমাধ্যমে কর্মরত ব্যক্তিগণদের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের বিষয়ে বিবেচনা।
ক্লিন ও গ্রীন সিলেট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পানির স্তর, পরিবেশের ভারসাম্য ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিক রাখতে সিলেট নগরীর সকল পুকুর, দিঘি, খাল, ছড়া ও জলাশয় রক্ষা, সংরক্ষণ, খনন, পুনঃখনন, সংস্কার ও উন্নয়নে কার্যক্রম অব্যাহত রেখে এ কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ।
অবৈধ স্ট্যান্ড ও পার্কিং বন্ধ করার লক্ষ্যে সিসিক এর উদ্যোগে পার্কিং জোন ও স্ট্যান্ড তৈরি করা আশু জরুরী। এছাড়াও বড় বড় বিপণী ও মার্কেটগুলোর নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা।
স্বল্প আয়ের নগরবাসীর যাতায়াতের অন্যতম বাহন হচ্ছে রিক্সা ও অটোরিক্সা। ১/১১ সরকারের আমলে রিক্সা ভাড়া নিয়ন্ত্রণে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। সেই উদ্যোগে বাস্তাবিয়ত না হওয়ায় নগরবাসী হয়রানী শিকার হওয়ার পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিন রিক্সা চালকের সাথে যাত্রীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। এই দুর্ভোগ নিরসনে পর্যাপ্ত টাউন বাস সার্ভিস চালু, রিক্সা ও অটোরিক্সা (সিএনজি) ভাড়া দ্রুত নির্ধারণ করে স্বল্প আয়ের নগরবাসীর সমস্যা সমাধানের উদ্যেগ গ্রহণ।
নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় মুক্ত আকাশ ও নৈসর্গিক পরিবেশ এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোতে কোন ধরনের পোস্টার, বিলবোর্ড না লাগানোর বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা।
বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা এবং সিলেট নগরীকে লোডশেডিং মুক্ত করার লক্ষ্যে সিসিকের উদ্যোগে সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহনের দাবী।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে নির্মিত সিলেট নগরীর অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শাহী ঈদগাহ’র রক্ষণা-বেক্ষণ ও দুই ঈদের প্রধান জামাতের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাপনা করে থাকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। সেহেতু শাহী ঈদগাহ’র পরিচালনা পরিষদ মেয়র এর নেতৃত্বে গঠন করার দাবী সহ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন উপমহাদেশের প্রথম শহীদ হচ্ছেন সিলেটের দুই সহোদর হাদা মিয়া ও মাদা মিয়া। তাঁদের স্মৃতি রক্ষার্থে সিলেট ক্বীন ব্রিজের দুই পাশে দুটি তোরণ তাদের নামে নামকরণের দাবী জানানো হয়েছে।
সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ধৈর্য্য সহকারে নেতৃবৃন্দের কথা শুনেন এবং প্রস্তাবগুলো পড়েন।
তিনি নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন হোল্ডিং টেক্স সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এবং কোন বৈষম্য হবে না। তিনি নগর উন্নয়ন সর্বস্তরের নাগরিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে, সিলেট সিটি কর্পোরেশন শতকরা ৫ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার ১১ ভাগ পর্যন্ত ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। ট্যাক্স বাড়ে শতকরা ৫,১০ কিংবা ৫০ ভাগ আর এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। সিসিক বাড়িয়েছে শতকরা ১০ হাজার ভাগ কোন কোন ক্ষেত্রে এর চেয়ে আরো বেশি।
গত রবিবার (৫ মে) সিলেট সিটিকর্পোরেশন প্রাঙ্গনে গিয়ে দেখা যায় মানুষের দীর্ঘ লাইন। নতুন এসেসমেন্টে হোল্ডিং ট্যাক্সের শতকরা হার নিয়ে নাগরিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অনেকেই ভৌতিক এবং অমানবিক হোল্ডিং ট্যাক্সের এই কার্যক্রম বন্ধ এবং বাতিল করার দাবী জানান। প্রয়োজনে তারা মামলা এবং গণআন্দোলন করারও হুমকি দেন।
২১ নং ওয়ার্ডে বসবাসকারী পিন্টু চন্দ্র (৩৫) একটি সেলুনে কাজ করেন। তিনি বছরে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতেন ১২০০ টাকা । নতুন এসেসমেন্টে এটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫৪ হাজার টাকা অথাৎ শতকরা ৪,৫০০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। তিনি কাঁদ কাঁদ কন্ঠে বলেন, টিনের ঘরে বসবাস করি আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ বছরে এতো টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো।
২৭ নং ওয়ার্ডে বসবাসকারী সংবাদকর্মী আফরোজ খানের বার্ষিক হোল্ডিং ট্যাক্স ছিলো ৩০৮৬ টাকা। নতুন এসেসমেন্টে এটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১,৫৬,৬০০টাকা । শতকরা হারে প্রায় ৫০৭৮ ভাগ। তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন-এসেসমেন্টের সময় সিসিকের লোকজনের মাথা হয়তো ঠিক ছিলো না। জানিনা তারা কী খেয়ে এমন উদ্ভট কাজ করেছেন।
সুজন সভাপতি ফারক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে এমন অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত নগরপিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে নগরবাসীর সাথে সিসিক মতবিনিময় করে শতকরা কতভাগ ট্যাক্স বাড়াবে তা নির্ধারণ করতে পারতো। তিনি বলেন, সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি, বর্তমান হোল্ডিং ট্যাক্স এর কার্যক্রম স্থগিত করে একটি সার্বজনিন সভা করে সকলের মতামতের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্সের হার নির্ধারণ করা হোক।
সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, যারা হোল্ডিং ট্যাক্স দেয় তাদের উপর বোঝা না চাপিয়ে নতুন ট্যাক্সদাতা তৈরী করা উচিত। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াবার আগে নাগরিক সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই সময়ে যখন মানুষের নাভিশ্বাস তখন এমন ভৌতিক হোল্ডিং ট্যাক্স মেনে নেয়া যায় না। এই কার্যক্রম স্থগিত করে সহনীয় হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হউক।
সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, নতুন এসেসমেন্টে হোল্ডিং ট্যাক্স এর যে হার বসানো হয়েছে এটা রীতিমত নগরবাসীর সাথে জুলুম। নির্বাচনের পূর্বে মেয়র মো: আনোয়া্রুজ্জামান চৌধুরী বহুবার বলেছেন, ট্যাক্স না বাড়িয়ে তিনি নাগরিক সুযোগ সুবিধা বাড়াবেন,নগরবাসীকে গ্যাস দেবেন।
ভৌতিক এই হোল্ডিং ট্যাক্স কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করারও তিনি দাবী জানান।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মেয়র মো: আনোয়ারুজ্জামানের মোবাইলে বার বার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। রাত ১১.৪৫ মিনিটে পূনরায় চেষ্টা করলে তাঁর মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
পরে জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই। মানবিক মেয়র মো: আনোয়ারুজ্জামান মহোদয় বিষয়টি দেখবেন। তিনি আরো বলেন হোল্ডিং ট্যাক্সের এই কার্যক্রমটি সাবেক মেয়র মহোদয় আরিফুল হক চৌধুরীর সময়ে নেয়া হয়েছিলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিসিকের এক ওয়ার্ড-কাউন্সিলর জানান, সিলেটকে গ্রীন সিটি, ক্লিন সিটি ও স্মার্ট সিটি বিনির্মাণে এবং ফুটপাত থেকে হকার সরিয়ে মেয়র মো: আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ইতোমধ্যে নগরবাসীর দৃষ্টি কেড়েছেন। তাকে বিতর্কিত করতে সিসিকে ঘাপটি মেরে বসে থাকা সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অনুসারীরা প্ররোচনা দিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স এর এই নাটক মঞ্চস্থ করছে।