শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৪ অপরাহ্ন
বিডিসিলেট ডেস্ক : সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ৯০০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে সিলেট বিভাগ ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনা থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন রোগীরা। বিশেষ করে তৃণমূলের গরিব ও অসহায় রোগীদের একমাত্র ভরসাস্থল এ হাসপাতাল। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে নানা সংকটের কারণে চিকিৎসা নিতে এসে বিপাকে পড়তে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।
গত কয়েক মাস ধরে মাত্র ৫ টাকা দামের ইনজেকশনের একটি সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে নরমাল স্যালাইনেরও সরবরাহ নেই এ হাসপাতালে। ধীরে ধীরে ওষুধের এ সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। সম্প্রতি ফিল্মের অভাবে সীমিত করা হয়েছে সিটি স্ক্যান পরীক্ষা। গত দুই মাস ধরে শুধুমাত্র মাথার সিটি স্ক্যান ছাড়া আর কোনো সিটি স্ক্যানের পরীক্ষা হাসপাতালে হচ্ছে না। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা। বাধ্য হয়ে নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল থেকে চড়া মূল্যে সিটি স্ক্যান করাচ্ছেন রোগীরা।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, দরপত্র জটিলতায় কিছু সংকট দেখা দিয়েছে। তবে কোনো সেবা একেবারে বন্ধ হয়নি। সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ ওষুধ ও সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়েছে। শিগগিরই এ সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৩৫-৪০ জন রোগী সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করে থাকেন। ব্রেইন, পেট ও বুক ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সিটি স্ক্যান করা হতো এখানে। কিন্তু গত দুই মাস ধরে শুধুমাত্র ব্রেইন সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে। যার কারণে সিটি স্ক্যানের অন্য পরীক্ষা বাইরে থেকে চড়া দামে করতে হচ্ছে রোগীদের।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, মাথা সিটি স্ক্যানে মাত্র একটি ফিল্ম ব্যবহার হয়। আর পেটের সিটি স্ক্যানে ৭-৮টি ফিল্ম ও বুকের সিটি স্ক্যানে ৫টি ফিল্ম প্রয়োজন হয়। সকল ধরনের সিটি স্ক্যান করলে প্রচুর পরিমাণে ফিল্মের প্রয়োজন হয়। সরবরাহ না থাকায় সিটি স্ক্যান সেবা যাতে একেবারে বন্ধ হয়ে না যায়, সেজন্য গত দুই মাস ধরে শুধুমাত্র মাথা সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাতেগোনা কয়েকজন রোগী সিটি স্ক্যান অব ব্রেইন পরীক্ষা করেছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন বেশ কিছুদিন ধরে চেষ্টা করে সিরিয়াল নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের সিটি স্ক্যান বিভাগে দায়িত্বরত টেকনোলজিস্ট বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক গত দুই মাস ধরে শুধু মাথার সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে। ফিল্ম নেই। তাই একেবারে বন্ধ থাকার চেয়ে মাথার সিটি স্ক্যান করে এই বিভাগের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।
এদিকে গত কয়েক মাস ধরে হাসাতালে ওষুধ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, স্যালাইন সেট, নরমাল স্যালাইনসহ কোনো ওষুধেরই সরবরাহ নেই হাসপাতালে। মাত্র পাঁচ টাকা দামের একটি ৫ সিসি ইনজেকশন সিরিঞ্জও রোগীদের কিনতে হয় বাইরে থেকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হৃদরোগ, মেডিসিন, ডায়ালাইসিস, গাইনি বিভাগ এমনকি নবজাতকের আইসিইউ বিভাগ পর্যন্ত কোথাও একটি সিরিঞ্জেরও সাপ্লাই নেই। নবজাতকের আইসিইউতে আগে সেপটাজিম নামে একটি ইনজেকশন হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হলেও এখন সেটিও রোগীকে কিনতে হয় বাইরে থেকে। তাছাড়া ডায়ালাইসিস বিভাগে বহুল ব্যবহৃত ব্লাড লাইনও কিনতে হয় রোগীদের।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার ডা. জলিল কায়সার খোকন বলেন, কিছু জটিলতার কারণে এখনও অনেক দরপত্র আটকে আছে। আমরা ইচ্ছা করলেও অনেক কিছু সরবরাহ করতে পারছি না। তবে ফিল্মের অভাবে একেবারে সিটি স্ক্যান বন্ধ, তা না। যেগুলো জরুরি সেগুলো করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, দরপত্রের মাধ্যমে এ বছর ৪৩ লাখ টাকার ওষুধসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কেনা হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে সেগুলো প্রতিটি বিভাগে সরবরাহ করা হবে। আশা করছি এ সংকট কেটে যাবে।
তবে ওষুধসহ কোনো কিছুর সংকট নেই বলে দাবি করছেন হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী। তিনি বলেন, হাসপাতালের কোনো সার্ভিস বন্ধ নেই। সকল পরীক্ষা করা হয়। মাঝখানে টেন্ডার প্রক্রিয়ার কারণে ফিল্ম হাতে ছিল না। কিছু পরীক্ষা স্লো ছিল। এখন আবার সরঞ্জামাদি চলে এসেছে। দুই তিনদিন থেকে সব স্বাভাবিক রয়েছে।
ওষুধ সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওষুধের বাজেটের একটি বড় অংশ দেয় সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারি প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত ওষুধ কিনতে সরকারেরও নির্দেশনা রয়েছে। তাদের কাছ থেকে আমরা ক্রয় করি। সারাদেশে সাপ্লাই দিতে গিয়ে আমরা অনেক সময় কিছুটা ওষুধ কম দিই। পরবর্তীতে আবার দিই। এক্ষেত্রে কিছু সময় ওষুধ পেতে দেরি হয়। তবে চলমান ওষুধ একেবারে নেই, এরকম হয় না।
ইনজেকশনের সিরিঞ্জের সরবরাহ না থাকা প্রসঙ্গে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, সিরিঞ্জের টেন্ডারের জটিলতার কারণে মাঝখানে ছিল না। টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনও চলছে। কিছু কিছু জায়গায় হয়তো ঘাটতি থাকতে পারে। তবে একনাগাড়ে অনেকদিন থেকে ওষুধ নেই এরকম সুযোগ কম।