BD SYLHET NEWS
সিলেটসোমবার, ৩১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, সন্ধ্যা ৬:২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে সরকার


সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ ১:৪৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

এম জসীম উদ্দিন:: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। দেশ মাতৃকার সেবায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বর্তমান সরকার জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সর্বোচ্চ সন্মান দিতে বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দেশের মুক্তিযুদ্ধে সকল শহিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার যাতে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসকদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ডিসি এবং মন্ত্রণালয়কে বলেন, “আমি কোনো শহিদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে ভিক্ষা করতে দেখতে চাই না। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ আমাদের সকল কর্মকাণ্ডের শীর্ষে রয়েছে”।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার বিগত ১৩ বছর ধরে কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২১-২২ অর্থবছরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ৬ হাজার ৩শত ৪৩ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বীর মুক্তিয়োদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সম্বলিত Management Information System প্রস্তুত করে G2P প্রক্রিয়ায় সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ও অন্যান্য ভাতা বাংলাদেশ ব্যাংক হতে সরাসরি ভাতাভোগীর ব্যাংক হিসাবে প্রদান কাযক্রম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিগত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে উদ্বোধন করেছেন। বর্তমানে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সম্মানীভাতা অন-লাইনের মাধ্যমে তাঁদের নিজস্ব হিসাব নম্বরে প্রেরণ করা হচ্ছে। এছাড়া মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করতে ৪ হাজার ১ শত ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ হাজার ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ‘বীর নিবাস’ নামের এই নান্দনিক ঘর গুলো দেশে ৮ টি বিভাগ ও ৬৪ জেলায় নির্মিত হচ্ছে। পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশেরর প্রতিটি জেলা- উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল হতে পর্যায়ক্রমে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতার হার মাসিক ৯০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে মাসিক ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করেছে। বর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ২টি উৎসব ভাতা, মহান বিজয় দিবস ভাতা এবং বাংলা নববর্ষ ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল হতে ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ১ লক্ষ থেকে বৃদ্ধি করে ২ লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির সর্বমোট ৭ হাজার ৮শ ৩৮ জন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, শহিদ পরিবার ও বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ পরিবারের মাসিক রাষ্ট্রীয় ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে প্রদান করা হচ্ছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরস্থ গজনবী সড়কে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১ এ ৮৪টি ফ্ল্যাট ও ৭৪টি দোকান আছে। তন্মধ্যে ৩৩টি ফ্ল্যাট ও ৩৩টি দোকান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভাতাভাগি সকল শ্রেণির যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে স্বল্প মূল্যে রেশন প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষা ভাতা, বিবাহ ভাতা, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা খরচ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চলাফেরার জন্য হুইল চেয়ার, ক্র্যাচ, লাঠি, কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, জুতা, মোজা, শ্রবণ যন্ত্র, চশমা ইত্যাদি প্রদান করা হচ্ছে। মৃত দেহ দাফন/সৎকার: রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতাপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করলে তাঁর ইচ্ছাকৃত স্থানে গার্ড অব অনারসহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মৃত দেহ দাফন/সৎকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পানির ও পয়ঃ নিস্কাশন বিল, গ্যাস বিল, হোল্ডিং ট্যাক্স সুবিধা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসা ও অন্যান্য কাজে ট্রাস্টের কর্মকর্তাদের সহিত যোগাযোগের জন্য ২০১৭ সালে হুইল চেয়ারে চলাচলকারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মোবাইল ফোন দেওয়া হয়েছে। এ খাতে প্রতিজনকে মাসিক ১,১০০/- টাকা হতে ১৯০০/- পর্যন্ত মোবাইল বিল প্রদান করা হয়ে থাকে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়। উক্ত পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে তাঁরা নিম্নবর্ণিত

সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেনঃ
যুদ্ধাহত মু্ক্তিযোদ্ধাগণ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রথম শ্রেণিতে বিনা ভাড়ায় যাতায়াত সুবিধা পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটে এবং আন্তর্জাতিক যে কোন রুটে (ইকোনমি) বছরে একবার যাতায়াত সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিআরটিসির বাসে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা পেয়ে থাকেন। বি, আই, ডব্লিউ, টি, এ’র জলযানে প্রথম শ্রেণিতে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা পেয়ে থাকেন। সেতু পারাপারের ক্ষেত্রে গাড়ির টোল মওকুফ সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিআইডব্লিউটিএ’র ফেরি পারাপারের ক্ষেত্রে তাঁদের বহনকারি প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও এ্যাম্বুলেন্স বিনা ভাড়ায় পারাপারের সুবিধা পেয়ে থাকেন।

সারাদেশের হাট-বাজারের ইজারালব্ধ অর্থ হতে প্রাপ্ত ৪% টাকা অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রদান করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরতে ও নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করতে ৬৪টি জেলায় প্রায় ৪০০টি লাইব্রেরিতে বিনামূল্যে অনুদান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই/পুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সুপারিশের আলোকে ১৮৮ জন মহিলা মুক্তিযোদ্ধার (বীরাঙ্গনার) নাম গেজেটে প্রকাশ। মুজিব নগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন। ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করার লক্ষে ২৯৭১টি বাসস্থানের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত। এর পাশাপাশি দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীনামূল্যে/ স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার।

মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে ‘বীর’ শব্দটি ব্যবহারের বিধান করে ২০২০ সালে গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গেজেটে, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮ এর ধারা ২(১১) এ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে জাতীয় পরিচয়পত্রে ‘বীর মুক্তযোদ্ধা’ খচিত উন্নতমানের স্মার্ট কার্ড অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। বিগত ১৩ বছরে তাদের জীবন মান উন্নয়নে সরকারের নানাবিধ পদক্ষেপ প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই সময়ের মধ্যে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জীবনমানের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন পরম শ্রদ্ধায় জাতি তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মনে রাখবে।

লেখক: তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদফতর,বাংলাদেশ সচিবালয়।

 

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।