বৃহস্পতিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:০২ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম ::
সিলেটে যুব মজলিসের দাওয়াতি মজলিস অনুষ্ঠিত ও জেলা শাখা পুনর্গঠন বড়লেখায় নিসচার উদ্যোগে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন সিলেটে বর্ণিল আয়োজনে দৈনিক আমাদের সময়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন সিলেটে কাল শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ সংলাপ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে যুবলীগ : ভিপি শামীম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও জিকে গউছ এর মুক্তি কামনায় দরগাহ দোয়া মাহফিল জৈন্তাপুরে ‘মোটরসাইকেলসহ চুর’ গ্রেফতার ১ প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা সিলেটে ক্রাশার মেশিন থেকে পাথর ছিটকে পড়ে শ্রমিক নিহত শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের খেলাধুলা পরিদর্শনে কানাডার হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারী ব্যাটারি চালিত যানবাহনের লাইসেন্স প্রদান করুন: সংগ্রাম পরিষদ ছাতকে পৃথক অভিযানে আড়াই কোটি টাকার চালান জব্দ, গ্রেফতার ১৫ ভূমিকম্প নিয়ে আতংক নয় সচেতন হতে হবে: বিভাগীয় কমিশনার সিলেটে ফুটবল খেলতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে শি শু র মৃ ত্যু যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী




ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ

Screenshot 20230913 004639 Gallery - BD Sylhet News




এম জসীম উদ্দিন:: স্মার্ট বাংলাদেশ হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিশ্রুতি ও স্লোগান যা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম এই প্রতিশ্রুতি ও স্লোগান দেন। ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ পর্ব শেষে আবারও নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের লক্ষ্যের নাম ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’। আপাতদৃষ্টিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশ একই প্রকৃতির রূপকল্প মনে হলেও ব্যবহারিক ও ধারণাগত দৃষ্টিকোণ থেকে তা বেশ ভিন্ন। ডিজিটাল বাংলাদেশ হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যম। অপরপক্ষে স্মার্ট বাংলাদেশ হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী সুসংহত পরিমার্জিত রূপ, যা মূলত সরকারি সেবা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ স্মার্ট ভাবে উপস্থাপনের প্রয়াস, যেখানে সকল ধরনের ন্যায্য জনঅধিকার পূর্বের তুলনায় অধিকতর সক্ষমতার সঙ্গে নিশ্চিত করার মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে। মূলত চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার প্রয়াসই হলো স্মার্ট বাংলাদেশ।

২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা ছিল বাংলাদেশের  ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং অনুপ্রেরণাদায়ী একটি ঘোষণা। এই ঘোষণা সমাজের সকল শ্রেণির বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট ও প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছে বেশি। সে ঘোষণার প্রায় ১৩ বছর পর ৭ এপ্রিল ২০২২ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স এর তৃতীয় সভায় দিলেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ রূপকল্প বাস্তবায়নের ধারণা। ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে তিনি বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপ হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন তিনি আরো বলেন বাংলাদেশের জন্য চারটা ভিত্তি ঠিক করা হয়েছে (১)স্মার্ট সিটিজেন (২) স্মার্ট ইকোনোমি (৩)স্মার্ট গভর্মেন্ট (৪)স্মার্ট সোসাইটি।

স্মার্ট সিটিজেন: এই স্তম্ভটির লক্ষ্য থাকবে বাংলাদেশের জনগণকে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে মননে ও মেধায় ক্ষমতায়িত করা। ২০৪১ সালের বাংলাদেশের নাগরিককে সরকারের সকল কর্মকান্ডের এবং অর্থনীতির প্রাণশক্তি হিসেবে গড়ে তোলাই হলো স্মার্ট সিটিজেন ধারণার বাস্তবায়নের অন্যতম উদ্দেশ্য। স্মার্ট ইকোনমিঃ বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে উদ্ভাবনীমূলক, যেখানে বাংলাদেশ শিল্পপ্রযুক্তি বিপ্লবের অগ্রভাগে নেতৃত্ব দেবে, বিশেষ করে বস্ত্র, তৈরি পোশাক, হালকা প্রকৌশল সহ কৃষি খাত সমূহে। এই খাতসমূহে একটি স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি শক্তিশালী তথ্য ও প্রযুক্তি শিল্প গড়ে তুলবে। স্মার্ট গভর্নমেন্টঃ ২০৪১ সালের সরকার ব্যবস্থা হবে অনেকটা ‘অদৃশ্য সরকার ব্যবস্থা’।  মানুষ যে-কোনো ধরনের সেবা পাবে কোন ধরনের মানুষের প্রত্যক্ষ সহায়তা ব্যতীত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, জননিরাপত্তা, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি একান্ত ব্যক্তিগত সেবাসমূহ হবে সম্পূর্ণ পেপারলেস। স্মার্ট সোসাইটিঃ স্মার্ট সোসাইটি বলতে মূলত অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থাকে বুঝাবে যেখানে সমাজের সকল শ্রেণীর নাগরিক ও টেকসই জীবনযাত্রা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রযুক্তিগত সহনশীলতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি মানবিক বিষয়াদি নাগরিকদের মধ্যে প্রোথিত থাকবে। স্মার্ট সোসাইটির জীবনযাত্রা হবে স্থিতিশীল, প্রাণোচ্ছল যার চালিকাশক্তি আসবে একটি সমন্বিত প্রযুক্তিগত প্ল্যাটফর্ম হতে।

এ বিবেচনায় ২০২১ থেকে ৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন শুরু হয়ে গেছে, অর্থাৎ ’২১ থেকে ’৪১ পর্যন্ত সময়ে কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে, তার একটা কাঠামো পরিকল্পনা বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই প্রণয়ন করে ফেলেছে, যা জনগণের জন্য অন্যতম আশীর্বাদ বয়ে আনবে। অন্যদিকে ২০৪১ সালেই শেষ নয়, ২১০০ সালেও এ বঙ্গীয় বদ্বীপ যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়, দেশ উন্নত হয়, দেশের মানুষ যাতে ‘সুন্দর, সুস্থ ও স্মার্টলি’ বাঁচতে পারে, সেজন্য ডেল্টা প্ল্যান করে দেওয়ার কথা বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে সরকার দেশের সব নাগরিকের জন্য ন্যাশনাল আইডি (এনআইডি) চালু করেছে, যেহেতু এনআইডি সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর একটি ডকুমেন্ট, তাই এর গ্রহণযোগ্যতা শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, দেশের বাইরেও অনেক বেশি। অথচ বিদেশিরা আগে আমাদের দেশের কাগজপত্র খুব সহজে বিশ্বাস করতে চাইত না। এখানেই দৃশ্যমান হয় ডিজিটাল বাংলাদেশের গুরুত্ব ও সুবিধা।

ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠনের পাশাপাশি একটি নির্বাহী কমিটিও গঠিত হয়েছে, যারা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করবেন। টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির কর্মপরিধিতে বলা হয়েছে, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ কার্যকর রূপান্তরে স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আবশ্যকীয় ব্যবস্থা নেওয়া, আইন ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো সৃষ্টি এবং সকল পর্যায়ে তা কার্যকর কারণে দিকনির্দেশনা দেবে এ কমিটি। বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দেশে ৩৯ টি হাইটেক পার্ক করা হয়েছে। গবেষণা-উদ্বোধনী কাজে উৎসাহ দেওয়া এবং ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমির মধ্যে নেটওয়ার্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ গত ৬ জুলাই, ২০২২ তারিখে উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বর্তমানে সারাদেশে ৯২ টি হাইটেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউভেশন সেন্টার’ স্থাপনের কাজ চলছে। দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য ৬৪ জেলায় ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ স্থাপন করা হচ্ছে, যার মধ্যে তিনটি প্রকল্প অনুমোদিত এবং আরো ৩৪টি জেলায় এটি স্থাপনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী প্রজন্মকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলার উপযোগী করে গড়ে তুলতে এবং ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি শিক্ষা দিতে ৩০০টি স্কুল অব ফিউচার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

সকলের সাম্মলিত প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ যেমন সফল হয়েছে, তেমনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও সফল হবে এই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক: তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদফতর।

শেয়ার করুন...











বিডি সিলেট নিউজ মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। © ২০২৩
Design & Developed BY Cloud Service BD