রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩১ অপরাহ্ন
বিডিসিলেট ডেস্ক : দেশীয় প্রজাতি মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত হাওরাঞ্চালের দিরাইয়ে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমটা মৎস্য আহরণের উপযুক্ত সময় হলেও হাওরের জলাশয়গুলো প্রায় মাছশূন্য হয়ে পড়েছে।
মৎস্য আহরণে গিয়ে চাহিদা অনুযায়ী মাছ না পাওয়ায় জেলেদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। পাশাপাশি বাড়তি দাম দিয়েও মাছের অভাব পূরণ করতে না পারার কষ্টও রয়েছে ক্রেতা সাধারণের মাঝে। দেশীয় মাছের উৎপাদন যেভাবে কমতে শুরু করেছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ‘মাছের দেশ’ খ্যাত হাওরাঞ্চালের মানুষ চরম আমিষ সঙ্কটে পড়বেন বলে জানিয়েছেন হাওর পাড়ের বাসিন্দারা।
এক ফসলি এলাকায় আয়ের প্রধান উৎস ধান ও মাছ। বিশেষ করে বোরো ধানের বাম্পার ফলনে এই এলাকার মানুষের মুখে সারা বছর হাসি থাকে। সুখে থাকে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা সহজ-সরল মানুষগুলো। ফসল নষ্ট হলে হাওরাঞ্চালের সাধারণ পরিবারগুলোর কষ্টের শেষ থাকে না। কারণ সোনালি ধান ঘরে ওঠা মানেই বছরজুড়ে ভাতের যেমন নিশ্চয়তা, তেমনি ধান বিক্রিতেই মেটে পরিবারের অন্যান্য ব্যয়ও।
মূলত ছয় মাস হাওরাঞ্চালে পানি থাকে। সেখানে প্রচলিত কথা হলো, ‘বর্ষায় নাও আর হেমন্তে পাও।’ পুরো ছয় মাস হাওরাঞ্চালের মানুষের একমাত্র আয় মৎস্য আহরণ থেকে।
মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতীতের তুলনায় হাওরে মাছ নাই বললেই চলে। সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবার হাওরে পানি আসে দেরিতে। এ ছাড়াও মা মাছের পোনা ছাড়ার সময় প্রচন্ড গরম পড়ায় মা মাছগুলো ঠিকমতো পোনা ছাড়তে পারেনি। সব মিলিয়ে ভরা মৌসুমে হাওরাঞ্চালে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় জেলেরা জানায়, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আর মানবসৃষ্ট নানা কারণে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এসব দেশি মাছ। সেই সঙ্গে নদীর নাব্যতা হারানো এবং মৎস্য অভয়াশ্রম না থাকাতেও কমে যাচ্ছে দেশি মাছ। এছাড়া হাওর এলাকার কৃষি জমিতে মাত্রারিতিক্ত সার প্রয়োগ, অবৈধ জাল ব্যবহার ও জলাশয় শুকিয়ে নির্বিচারে মৎস্য নিধন, কীটনাশকের মাধ্যমে মাছ ধরা ও জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণেই দেশি প্রজাতির মিঠাপানির মাছে আকাল দেখা দিয়েছে। বর্তমানে হাওর পাড়ের মানুষ চাষের মাছের ওপর নির্ভর করায় পুকুরের চাষকৃত মাছের দামও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে।
মাছ বিক্রেতা ধীরেন্দ্র বর্মন বলেন, মাছ পাওয়া-ই যায় না। পুকুরের চাষ করা মাছ-ই চড়া দামে বিক্রি করতে হয়। বাজারে পুকুরে চাষ করা মাছের দর অনেক। পাবদা ৫০০ টাকা, শিং সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, কারপো মাছ সাড়ে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতারা আরও জানান, হাওরে মাছ না থাকায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ উজান এলাকা থেকে পুকুরে চাষ করা মাছ এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন তারা। অন্য মাছ না পেয়ে চাষের মাছই চড়া দামে কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শরীফুল আলম বলেন, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী উপজেলায় ছোট বড় ১ হাজার ১৭৩টি পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। এ অঞ্চলে আগে পাঙ্গাস, রুই, কাতলা মাছ-ই বেশি চাষ করা হতো। বর্তমানে মৎস্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় পাবদা, টেংরাসহ দেশি প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে। হাওরে দেশি মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এ বছর হাওরে পানি সময় মতো আসেনি। পানি দেরিতে আসায় মা মাছগুলো ডিম ছাড়তে পারেনি এ কারণে হাওরে দেশি মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। সুত্র: ইত্তেফাক