বৃহস্পতিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন
বিডিসিলেট প্রতিবেদক : পিয়ারা বেগম সাত সন্তানের জননী। ৮ বছর পূর্বে তাঁর স্বামী মারা যান। স্বামী হারানো এ নারী জীবনযুদ্ধে তিল তিল করে সংসারের স্বচ্ছতা আনতে লড়াই করছিলেন। এনজিও থেকে ঋণ আর গয়না বিক্রি করে কিনেছিলেন ছয়টি গরু। কিন্তু গরুগুলো চুরি হয়ে যাওয়ায় নি:স্ব হয়ে পড়েছেন পিয়ারা বেগম। কারণ গরুর দুধ বিক্রি করে ঋনের কিস্তির টাকা এবং সংসারের যোগান চলতো তার। গরুগুলো চুরি যাওয়ার পর থেকেই কান্না থামছে না পিয়ারা বেগমের। ঋনের টাকা পরিশোধ আর সংসার যোগানের দু:শ্চিতায় কাটছে তাঁর দিন। চোখে অস্রু ভরা জর তার। এখন তাঁর চোখে যে পুরো পৃথিবীটাই এখন অন্ধকার!
পিয়ারা বেগম সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের কাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা।
চুরির ঘটনায় গত সোমবার জগন্নাথপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার পিয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা হয় তাঁর বসতবাড়ীতে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, চোরেরা আমাকে নি:স্ব করে দিয়েছে। গত রোববার রাতে গোয়ালঘরের সব গরু চুরি হয়ে গেছে। এখন আমি কিভাবে বিভিন্ন এলজিও ঋনের টাকা পরিশোধ করব। এ চিন্তায় চোখে ঘুম নেই।
তিনি জানান, প্রতিদিন চার লিটার দুধ বিক্রি করে ৪০০ টাকা পেতেন। এই টাকা দিয়ে সংসার চলতো। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতেন । স্বামী মারা যাওয়ার পর গরু লালন-পালন করে দুই ছেলে ও তিন মেয়ের বিয়ে দেন। তৈরী করেন টিনশেডের পাকা ঘর ।
ওই নারী জানালেন, দুই সপ্তাহ আগে একটা এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিছি আর ছেলের বউয়ের একটা গয়না বেঁচে একটা ষাঁড় কিনছিলাম। এখন আমার সব শেষ হয়ে গেল।
পিয়ারা বেগমের ছোট ছেলে কামাল উদ্দিন বলেন, বিদেশি জাতের তিনটা গাভি ও তিনটা ষাঁড় গরু ছিল আমাদের সংসারের একমাত্র সম্বল। মায়ের সঙ্গে আমরা দুই ভাই গরু লালন-পালন করি। প্রতিদিনের মতোই গত রোববার ২টার দিকে গরুগুলোকে খাবার দিয়ে ঘুমায়ে পড়ি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে গোয়ালঘরের তালা ভাঙা। ভেতরে ঢুকে দেখে গরু নাই। পরে আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে একটা গরুরও খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২০১৫ সালের দিকে আমার আনোয়ার হোসেন মারা যান। বাবা যাওয়ার যাওয়ার পর আমরা দুই ভাই ও ৫ বোন মায়ের সঙ্গে সংসারে মাকে সহযোগিতা করতাম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম জানান, আট বছর আগে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ আর নিজের গয়না বেঁচে কিনেছিলেন কয়েকটি গরু। সেই গরুর দুধ বেচা টাকা দিয়ে ঋণের কিস্তি দেওয়াসহ ভালোই চলছিল পিয়ারা বেগমের সংসার। কিন্তু সেই গরুগুলো চুরি হয়ে যাওয়ায় তছনছ হয়ে গেছে ওই নারীর সংসার।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে এবং গরুগুলো উদ্ধারে কাজ করছে।