বিডি সিলেট ডেস্ক:: রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে অবহেলায় মা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় আটক দুই চিকিৎসকের মুক্তি দাবিতে সিলেট সহ সারাদেশে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা ও অস্ত্রোপচার বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। অবশ্য আন্দোলনকারীরা বলছেন, জরুরী রোগীদের ফেরাবেন না তারা। আর সরকার বলছে, এ ধরনের কর্মসূচি অমানবিক।
সোমবার (১৭ জুলাই) বন্ধ ছিলো বেসরকারি সব হাসপাতালে বহিঃর্বিভাগে চিকিৎসা সেবা। বন্ধ ছিল অপারেশন থিয়েটারও। আগে থেকে ধর্মঘটের খবর না জানায় চিকিৎসা নিতে আসা বহু রোগী ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন। চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যেতে হয় তাদের।
রাজধানীর রাজারবাগের বারাকাহ জেনারেল হাসপাতালে কুমিল্লা থেকে চিকিৎসা নিতে হারেসা বেগম বলেন, কিছুদিন আগে পায়ের লিগারমেন্ট ছিড়েছে। সেটার চিকিৎসা নিতেই এসেছিলাম। পরে জানলাম চিকিৎসক বসবেন না। আমি আসলে এ বিষয়ে কিছু জানতাম না। বন্ধ যে এটা আমি জানি না।’
সোমবার এই হাসপাতালে ১৬ জন রোগীর অস্ত্রোপচারের শিডিউল ছিল। বাতিল করা হয়েছে সব। সেবা নিতে এসে ফিরে গেছেন অনেক রোগী।
হাসপাতালটির এক কর্মচারি বলেন, ‘আমাদের আজ কোনো অপারেশন নেই। ডাক্তারদের স্ট্রাইক চলছে এজন্য অপারেশন বন্ধ। ইমার্জেন্সি হলে কি হবে এটা চিকিৎসকরা বলতে পারবেন। আমরা বলতে পারবো না।’
ঢাকায় বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার প্রায় আঠারোশ। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে ঝুলছে সেবা বন্ধের নোটিশ। এতে ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগী বিপাকে পড়েছেন বেশি।
বারাকাহ হাসপাতালের উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘অনেকেই যারা জানেন না। না জেনে অনেকেই আমাদের হাসপাতালে আসছেন। এসে যখন শুনছেন যে চিকিৎসকরা বসছেন না বা অপারেশন হচ্ছে না তখন তারা ফেরত যাচ্ছেন। এতে তাদের অনেকটাই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।’
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামেও সবধরনের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকেরা। এতে চিকিৎসা নিতে আসা অসুস্থদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। যদিও বিশেষ বিবেচনায় জরুরি অস্ত্রোপচারগুলো করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে, গ্রেপ্তার হওয়া দুই চিকিৎসককে দ্রুত মুক্তি না দিলে আরো কঠোর কর্মসূচির হুমকি তাদের।
চট্টগ্রাম শিশু হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দ দিদরুল মুনির বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ এবং অপারেশন বন্ধ। পাশাপাশি এটাও বলছি, জরুরী যে কোনো রোগী আমরা দেখবো। আমরা টেলিফোনেও চিকিৎসা দিচ্ছি। যে কোনো হাসপাতালেও কিন্তু জরুরী যে কোনো অপারেশন আমরা করতে বাধ্য।’
বগুড়াতেও ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা এবং অস্ত্রোপচার বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা। তবে, সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ, বৈকালিক চেম্বারসহ সব চিকিৎসা সেবাই চালু রয়েছে।
বরিশাল নগরীর ৪৯টি ও জেলার ৪০টি ক্নিনিক ও হাসপাতালে চেম্বারে সেবা দান বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে রোগীরা।
বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, ‘প্রাইভেট প্র্যাকটিসে দেখা যায় অনেক সময় ইমার্জেন্সি পেসেন্ট চলে আসে। সেই ক্ষেত্রে ওনারা ওই রোগীকে যেন সেবাটা দেন। এটুকু আমি অনুরোধ জানাবো যে ওনাদের ধর্মঘটের কারণে কোনো রোগী যেন প্রাণ না হারান, বিনা চিকিৎসায় মারা না যান।’
রাজশাহীর ১৩০টি বেসরকারি ক্লিনিকের চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ রয়েছে। লক্ষ্মীপুরেও সেবা বন্ধ ৪০টি তে। এ অবস্থায় আইসিইউর এবং অপারেশনের অপেক্ষায় থাকা রোগীদের দুর্ভোগে পৌঁছেছে চরমে।
স্বাস্থ্য সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের আশা দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, ‘বড় ডাক্তার হওয়ার চেয়ে মানবিক ডাক্তার হওয়াটা বেশি জরুরী। তাকে আগে মানবিক হতে হবে। তারা যে কাজটি করছে এটা সঠিক হচ্ছে কিনা এটা ভাবতে হবে। রোগী জিম্মি করা এটা তো কোনো পারসেপশনের মধ্যে পড়ে না। কোনো বিষয়ের মধ্যেই পড়ে না। কাজেই তাকে তো মানবিক হতে হবে। আমার পেসেন্ট যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় এটা তো আমি করতে পারি না।’
গেল ১০ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় মৃত্যু হয় এক নবজাতকের। সপ্তাহ খানেক পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নবজাতকের মা মাহবুবা রহমান আঁখিও। ওই ঘটনায় মামলা হলে দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেওয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
দুই চিকিৎসকের মুক্তির দাবিতে সোম ও মঙ্গলবার বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে আউটডোর ও অপারেশন বন্ধের ঘোষণা দেন চিকিৎসকেরা।