বিডিসিলেট ডটকম : রোববার সকাল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। প্রকৃতিতে বৃক্ষরাজি থেকে ঝরছিল টপটপ পানির ফোঁটা। পুরো ক্যাম্পাসের প্রকৃতি যেনো কাঁদছিল একজন ছেলে হারা মায়ের আগমনে!
বুলবুলের মা-বোনদের আর্তনাদে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন উপস্থিত তার সহপাঠিরা। নিহতের পরিবারকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টাও করেন। কিন্তু সন্তান হারানো মায়ের প্রলাপ কিংবা ভাই হারানো বোনের আর্তনাদ ছিল গগণ বিদারী।
গত সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় খুন হন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমদ। হত্যাকান্ডের সাত দিনের মাথায় শোকে কাতর মা, ভাই, বোনেরা এলেন ক্যাম্পাসে।
ক্যাম্পাসে শাহপরান হলে অতিথি কক্ষে তাদের অভ্যর্থনা জানান হল প্রভোস্ট অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান। সেখানে খানিকটা সময় অবস্থানকালে নিহতের কেবলমাত্র নিহতের মামা বুলবুলের আবাসস্থল (থাকার কক্ষ) ২১৮ নং কক্ষ ঘুরে দেখেন।
পরবর্তীতে পরিবারের কাছে বুলবুলের ব্যবহৃত ল্যাপটপ, হাতঘড়ি, তোষক, টেবিল ল্যাম্প, কাপড়সহ ১৫ ধরণের সামগ্রি হস্তান্তর করা হয়। বুলবুলের মা ইয়াসমিন বেগম এগুলো গ্রহণ করেন।
এসময় তারা নিহত বুলবুলের বান্ধবী মার্জিয়া আক্তার ঊর্মির সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু উপস্থিত তদন্তকারী কর্মকর্তা এসএমপির জালালাবাদ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ দেব জানিয়ে দেন মামলার বিষয়টি তদন্তধীন। তাই মেয়েটির সঙ্গে তারা কথা বলতে পারবেন না।
এসময় উপস্থিত শাবিপ্রবি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নিহতের পরিবারকে এক ধরণের নজরবন্দি অবস্থায় রাখে। তখন নিহতের ভাই ও মাকে আলাদাভাবে নিয়ে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করেন। তারা সুষ্ঠু বিচার পাবে, এমনটি আশ্বাস দেন এবং বিদায় নেওয়ার আগ পর্যন্ত ছাত্রলীগ নিহতের পরিবারের সঙ্গে ছিল।
নিহতের ভাই মো. জাকারিয়া বলেন, ‘ মাকে আটকিয়ে রাখতে পারছিলাম না। বুলবুল যেখানে থাকতো তিনি সেখানে আসতে চাচ্ছিলেন। তাই ক্যাম্পাসে নিয়ে আসি। আমরা ২ ভাই, ২ বোনের মধ্যে বুলবুল ছিল সবার ছোট এবং আদরের। সাতমাস আগে বাবা মারা যান। এ অবস্থায় তাকে পড়ালেখা করাতে গিয়ে অনেক বেগ পেতে হয় আমাদের পরিবারের। কষ্ট করে হলেও স্বপ্ন দিয়ে তাকে পড়ালেখা করাচ্ছিলাম। কিন্তু আমাদের পরিবারের স্বপ্ন মাটিতে মিশিয়ে দিল। আমরা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার দাবি করছি। যাতে ন্যায় বিচার পেয়ে ছেলে হত্যার শোকে কাতর মা কিছুটা হলেও সান্তনা পান।
তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যা মামলা তদন্তাধীন থাকলেও মনে হয় না সুষ্ঠু তদন্ত হবে, তা নিয়ে সন্দিহান তিনি। কেননা, বুলবুল হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী মেয়েটি (ঊর্মি)। কিন্তু মেয়েটির সঙ্গে আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। তিনি বুঝতেছেন না, প্রত্যক্ষদর্শী হলেও মেয়েটিকে কেনো তারা আড়ালে রাখছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, সপ্তাহখানেক পরে নাকি কথা বলাবেন।
মো. জাকারিয়া বলেন, আমার ভাই হারিয়েছি। তার অন্তিম সময়ে সেই মেয়েটিই কাছে ছিল। তার কাছ থেকে দু’টি কথা শুনতে পারতাম, কি ছিল তার শেষ কথা? তাছাড়া এখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, এরাওতো আমার ভাই-বোন। তাদেরওতো নিরাপত্তা নেই।
তিনি আরো বলেন, আমার ভাই আমার চেয়ে ৫ আঙ্গুল লম্বা ছিল। তার মতো ২/৩ টা ছেলে তাকে মেরে ফেলতে পারে, এটা বোধগম্য নয়। মেয়েটা কিসের জন্য পালিয়েছে, কললিস্ট মুছে দিয়েছে। ছুরিকাঘাতের পর ১৫ মিনিট রক্তক্ষরণ হয়েছে, ওই এলাকায় অহরহ মানুষ থাকলেও এই সময় মেয়েটি কি করছিল। ক্যাম্পাস এলাকা, ঘটনাস্থল ঘুরে তিনি এসব বিষয় জানতে পেরেছেন। তাই মেয়েটিকে ভালভাবে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার দাবি জানান তিনি।
তবে বুলবুলের সঙ্গে ঊর্মির সম্পর্ক ছিল কিনা, এ বিষয়ে তারা জানতেন না। তাছাড়া বুলবুল হত্যায় দায় স্বীকারকারীদের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের অনেকের বয়স হয়নি। আর কামরুলের বয়স বেশি হলেও সে ক্যান্সার আক্রান্ত জানতে পেরেছি। এ অবস্থায় সময় গড়িয়ে গেলে হত্যার ঘটনাটি হালকা হয়ে যাবে। তাই তদন্তের স্বার্থে মেয়েটিকে জিজ্ঞাবাদের দাবি করেন বুলবুলের পরিবার।
ভিসির সঙ্গে দেখা হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, গতরাতে ভিসি’র সঙ্গে ফোনে কথা হয়। তিনি আজ নরসিংদী যেতেন, কিন্তু করোনার কারণে যেতে পারেননি। আমরা সিলেট আসছি, বললে, উনি জানান, আমি ঢাকায় যাচ্ছি। এখন উনি আছে কিনা জানিনা। তবে তার মাকে নিয়ে ঘটনাস্থল গাজিকালু টিলায় যাননি, কেননা, তিনি সহ্য করতে পারবেন না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল নিহতের পরিবারকে সান্তনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা কথা দিচ্ছি বুলবুল হত্যার ন্যায় বিচার হবে। তদন্তের স্বার্থে আপনারা আমাদের উপর আস্থা রাখেন, আমরা কথা দিচ্ছি আপনাদের আস্থার প্রতিদান দেবো।
এদিকে বেলা পৌনে ২টার দিকে সাদা মাইক্রোবাসে শোকে কাতর নিয়ে বুলবুলের মা-ভাই-বোনেরা ক্যাম্পাস ছাড়েন।