বুধবার, ১৮ মে ২০২২, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন
লাইফস্টাইল ডেস্ক : মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য গ্রহণই সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এই যে এত এত কাজ, পরিশ্রম এসব কিছুই নির্ভর করছে মানুষের খাদ্য চাহিদার ওপর। আর তাই খাদ্য গ্রহণে আমাদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা উচিত।
আমরা কী খাব, কতটুকু খাব তা নিয়ে অনেক ভাবনাচিন্তায় পড়ে যাই। কিন্তু আসলে আমাদের শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে, কী খাওয়া উচিত আর কতটা খাওয়া উচিত তা থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কখন খাওয়া উচিত সেই সম্পর্কে ধারণা রাখা। সময় মতো খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত বিরতি দিয়ে খাবার খাওয়ায় জোর দেওয়া উচিত।
ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথম ৮/১০ ঘণ্টার মধ্যে খাবার গ্রহণ করা উচিত। যারা জিমে গিয়ে ব্যায়াম করেন, তাদের জিমের প্রশিক্ষকরা পরামর্শ দেন যে ব্যায়ামের আগে, পরে অথবা ব্যায়ামের সময় কিছু পুষ্টিকর খাবার খেতে। দেখা গেছে ক্যালরিযুক্ত খাবার দিনের প্রথম দিকে খেলে তা থেকে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
এক গবেষণা বলছে, মানুষের ২৪ ঘণ্টা দেহঘড়ির সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের একটা দারুণ সম্পর্ক রয়েছে। তারা বলছে, ঘুম থেকে জেগে ওঠার প্রথম ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে খাবার খেতে, যাতে শরীর খাবার হজম করার জন্য যথেষ্ট সময় পায়।
দেহঘড়ির সঙ্গে খাওয়ার যে সম্পর্ক
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের দেহের নিজস্ব একটা ঘড়ি আছে। সেই ঘড়ির ছন্দের সঙ্গে মিলিয়ে যখন মানুষ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে তখন মানুষের শরীর সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে। শরীরের ভেতর যে ২৪ ঘণ্টার ঘড়ি আছে, সে ঘড়ি একেকজনের জন্য একেক রকম। শরীরের প্রতিটি কোষ এই ঘড়ির ছন্দ অনুযায়ী কাজ করে। যার অর্থ হল প্রতিটি হরমোন, মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষের প্রতিটি রাসায়নিক, প্রতিটি এনজাইম নিঃসারিত হয় এই ঘড়ি ধরে, এমনকী এই ঘড়ি ধরেই শরীরের প্রতিটি জিন তার কাজ করে যায়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই ঘড়ির নিয়ম মেনে শরীর খাদ্য হজম করতে এবং তার থেকে পুষ্টি আহরণ করতে পারে মাত্র আট থেকে দশ ঘণ্টা পর্যন্ত। যা বড় জোর ১২ ঘণ্টা অব্দি যেতে পারে। এ সময়ের বাইরে আমাদের দেহঘড়ি অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে – যেমন শরীরের কোনো কোষ মেরামত করা বা কোষ পুনরুজ্জীবিত করার কাজে।
বিশ্রাম দিয়ে খাওয়া
৮ থেকে ১০ ঘণ্টার বাইরে যখন কিছু খাওয়া হয়, তখন এই মেরামতের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। শরীর তখন ওই নতুন খাবার হজম করার এবং তার থেকে পুষ্টি আহরণের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
নির্দিষ্ট সময় বিরতি দিয়ে খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে ‘বিশ্রাম দিয়ে খাওয়া’ বা ‘টাইম রেস্টেড ইটিং’ বলা হয়।
৮ থেকে ১০, বড়জোর ১২ ঘণ্টার মধ্যে খাওয়ার উপকারিতা সবচেয়ে বেশি। এই সময়ের বাইরে স্বাস্থ্যকর খাবার খেলেও তা শরীরের জন্য অদরকারি হয়ে উঠতে পারে। তাই বিরতি দিয়ে সময় মতো খাবার খেতে হবে।
যারা শিফটে কাজ করেন
শিফটে যারা অনবরত কাজ করেন ঠিক সময়ে খাওয়া তাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সেটা মানিয়ে নেওয়া সম্ভব। ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথমবার খাওয়ার আগে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। এরপর ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা হাতে রাখুন খাওয়ার জন্য। আবার যখন কাজের সময় নিয়মিত হবে তখন পুরনো নিয়মে ফিরে যান।
রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠে এটা সেটা খাওয়া বা ছুটির দিনে খাওয়ার নিয়ম ভেঙে সারাদিন ধরে টুকটুাক খাওয়া শরীরের জন্য ভালো নয় বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এধরনের অনিয়ম মানুষের হজমের প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। এবং শরীরের ভেতর যে ‘স্বাভাবিক ঘড়িটা’ কাজ করে তার ছন্দপতন ঘটায়। তথ্যসূত্র: বিবিসি