বিডি সিলেট ডেস্ক::বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে এবং ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশের বহুল আলোচিত রহস্যময় চরিত্র সিলেটের আবুল হারিছ চৌধুরী।
এবার তার ‘মৃত্যু’ নিয়েও সিলেট-বিলেতে (লন্ডন) শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলাসহ ৬টি মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তিনি।
তার স্বজনদের দাবি, তিনি গত বছরের মাঝামাঝি সময় লন্ডনে মারা গেছেন। অথচ লন্ডনে থাকা সিলেটিরা কেউই তা জানেন না। ফলে মৃত্যুর খবর অনেকে বিশ্বাস করতেই পারছেন না। তাছাড়া মৃত্যুর বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও আসেনি। প্রকাশ্যে এ সংক্রান্ত ধর্মীয়, সামাজিক বা রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিও পালিত হয়নি।
সিলেটের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত এলাকা কানাইঘাটের চৌধুরী পরিবারে জন্ম নেওয়া হারিছ চৌধুরী চারদলীয় জোট সরকারের সময় প্রচণ্ড প্রতাপশালী ও ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হারিছ পরবর্তীতে পালিয়ে যান। তার ফেরারি জীবন ছিল বড়ই রহস্যময়। পলাতক অবস্থায় তিনি কখনো ভারতে, কখনো ইরানে, কখনোবা যুক্তরাজ্যে বলে খবর ছড়ায় বিভিন্ন সময়। তার অবস্থান সম্পর্কে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও অনেকটা অন্ধকারে।
হারিছ চৌধুরীর ‘মৃত্যু’ নিয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও কানাইঘাটের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী বলেন, হারিছ চৌধুরীর চাচাত ভাই ও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তিনি বলেন, বড় ভাই হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন, এটা শতভাগ সত্য।
গত বছরের আগস্টে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কিছুদিন পর রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। একই বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান তিনি। মৃত্যুর পর সেখানেই তাকে দাফন করা হয়েছিল। আমি তখন আমেরিকায় ছিলাম। ওখান থেকেই তার মৃত্যুর খবর পেয়েছিলাম।
মৃত্যুর খবর এতদিন গোপন রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মৃত্যুর খবর গোপন বা প্রকাশ কোনোটাই আমি করিনি। কেউ খোঁজ নেয়নি বলেই বিষয়টি জানতে পারেননি।
প্রায় সাড়ে তিন মাস পর ফেসবুকে হঠাৎ হারিছের ছবির সঙ্গে নিজের ছবি জুড়ে ‘ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন’ এমন পোস্ট কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হঠাৎ বড় ভাইয়ের ছবি চোখে পড়ার পর আমি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি এবং ফেসবুকে পোস্ট দেই। সেই পোস্ট দেওয়ার পর অনেকেই খোঁজ নিচ্ছেন, একের পর এক ফোন দিচ্ছেন। ফেসবুকে শোক প্রকাশ করে কমেন্ট করার পাশাপাশি শেয়ার করছেন অনেকেই।
আশিক উদ্দিন চৌধুরী জানান, হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী জোসনা আরা চৌধুরী দুই সন্তান নিয়ে যুক্তরাজ্যে আছেন। ছেলে নায়েম শাফি চৌধুরী জনি পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার ও মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী ব্যারিস্টার।
হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে সাহায্য চাইলে আশিক চৌধুরী তাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ঢাকায় থাকতেন হারিছ চৌধুরীর ভাই সেলিম চৌধুরী। সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে বলেন, তিনিও বেঁচে নেই। হারিছ চৌধুরী মারা যাওয়ার কিছুদিন পর তিনিও মারা গেছেন। তার লাশ গ্রামের বাড়ি কানাইঘাটের দর্পনগর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
হারিছ চৌধুরীর ‘মৃত্যু’ উপলক্ষ্যে কোনো দোয়া, মিলাদ, শোকসভা, দলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়নি কেন জানতে চাইলে আশিক উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যুক্তরাজ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে নিজেদের মতো করে করা হয়েছে। ছোট ভাই সেলিম ঢাকায় মারা যাওয়ার পর হারিছ ও সেলিমের জন্য একসঙ্গে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়েছে গ্রামের বাড়ি কানাইঘাটের দর্পনগরে।
এদিকে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীমের বরাত দিয়ে হারিছ চৌধুরী বিদেশে নয়, ঢাকায় মারা গেছেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। হারিছ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি কানাইঘাটেও এ নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। তবে বিএনপি নেতা শামীম বলেন, আমি ঢাকায় মৃত্যু ও দাফনের কথা বলিনি। ঢাকার নেতাদের মুখ থেকে মৃত্যু, দাফনের খবর পেয়েছি বলেছিলাম। মৃত্যুর খবর জানার পর দলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ হয়েছে কিনা বা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি নয়, নীতিনির্ধারকরা বলতে পারবেন।
দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর ২০০৭ সালে হারিছ চৌধুরী সস্ত্রীক তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে যান। এর কয়েক ঘণ্টা পরই যৌথ বাহিনী হারিছের বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু তার আগেই তিনি সটকে পড়েন। এরপর আত্মগোপনে থেকে জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতের আসামের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে তার নানাবাড়ি চলে যান। পরে সেখান থেকেই বিদেশে পাড়ি জমান। হারিছ চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী আতিক গণমাধ্যমকে এসব তথ্য দিয়েছেন।
সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম বলেন, হারিছ চৌধুরী সিলেট জেলায় প্রকাশ্যে বা গোপনে আর ফেরেননি। তার বিরুদ্ধে ৬টি সাজার ওয়ারেন্ট আছে। তিনি বলেন, মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হতে আমরাও খোঁজখবর নিচ্ছি। সূত্র -যুগান্তর