BD SYLHET NEWS
সিলেটবুধবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ভোর ৫:১২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘তিন শিক্ষার্থীতে জিম্মি’ সিলেট সেন্ট্রাল ডেন্টাল কলেজ


ডিসেম্বর ২, ২০২৫ ১:২০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

বিডি সিলেট:: তিন শিক্ষার্থীর দানবীয় আচরনে জিম্মি হয়ে পড়ছে সিলেট সেন্ট্রাল ডেন্টাল কলেজে। ফ্যাসিস্ট আমলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ পরিচয়ে তারা ছিল বেপরোয়া। খোলস পাল্টে দ্রুত নতুন বাংলাদেশের রাজনীতিক শক্তির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে তারা। অতীতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকার ছবি এখনো ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাদের এহেন দ্বিচারীতায় হতাশ কলেজের শিক্ষার্থীরা। করিৎকর্মা এ তিন শিক্ষার্থী হচ্ছেন কলেজের বিডিএস ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইজাজ শাফিন চৌধুরী এবং বিডিএস ৫ম ব্যাচের দুই শিক্ষার্থী শাহরিয়ার শহিদ আসাদ ও আব্দুল মতিন মিজান।

রাজনীতি মুক্ত পরিবেশ থাকলেও তারা রাজনীতিক পরিচয়ে মাস্তানী দেখাচ্ছে এ ক্যাম্পাসে। নারী শিক্ষার্থীদের তটস্থ করে রাখে সারাক্ষণ। সিনিয়র মেয়ে শিক্ষার্থীদের আপত্তিকর ম্যাসেজ দিয়ে টিজিং করে। বিব্রত শিক্ষার্থীরা ইজ্জত সম্মানের ভয়ে নিরূপায়। নিরব প্রতিবাদের ভাষা উপলব্ধিতে ব্যর্থ কলেজ কর্তৃপক্ষও। এনিয়ে চাপা ক্ষোভও অশেষ। সে কারণে ধীরে ধীরে কলেজের শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ এখন হুমকির মুখে।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের অভিমত, চোখের সামনে ওই তিন শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক আচরন দেখতে হচ্ছে আমাদের। রক্ষণশীল সিলেটের ঐতিহ্য বিরোধী এমন তৎপরতা নিয়ে যেকোন সময় প্রতিবাদে নামার প্রস্তুতি চলছে।
যদি সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে পরিবেশ উত্তপ্ত হবে, এর দায়ও নিতে হবে তাদের। তাদের কথা হলো. তিন শিক্ষার্থীরা অতীত ও বর্তমান আচরনে সর্ম্পকে কলেজ কর্তৃপক্ষ অবগত, তারপরও এ্যাকশন না নেয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ। এছাড়া এই কলেজে ৫ আগস্ট পরবর্তীতে ফ্যাসিস্ট সহযোগী দুই ডাক্তার পার্টনারশীপ ক্রয় করে এই কলেজে হয়েছেন অর্ন্তভূক্ত। তারা সংযুক্ত হওয়ার পর এই কলেজ এখন পরিনত হয়েছে ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের অভ্যয়ারণ্যে। ৫ আগস্টের পূর্বে এই কলেজের প্রভাবশালী পার্টনার ছিলেন কানাডা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি পলাতক সরওয়ার হোসেন। স্বৈরাচার আ’লীগের পতনের পর গোপনে পালিয়ে যান কানাডায়। এমনকি এই কলেজের বর্তমান চেয়ারম্যান সিলেট নগরীর ২১ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ডা: আব্দুল ওয়াহিদ।
নতুন বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ করে তিন শিক্ষার্থী কিভাবে এতো বেপরোয়া, এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, কলেজে এখনও ফ্যাসিস্ট সহযোগীরা বহাল। তারা স্বার্থগত বন্দোবস্তের মাধ্যেমে নিজেদের শক্তিকে জিইয়ে রেখেছে এই ক্যাম্পাসে। এমনকি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অনেক নেতারা এই কলেজে গোপনে এসে নানা তথ্য সরবরাহ ও সংগ্রহ করছে, একই সাথে আওয়ামী দোসর তিন শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে কৌশলী করে গুপ্তভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে বর্তমান সরকার ও সরকারী সহেযাগী রাজনৈতিক শক্তিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষনে। বিষয়টি কেউ আমলে নিচ্চে না হয়তো বড় ধরনের ক্ষতির পর তারা সেদিকে মনযোগী হবেন, এমন আফসোস তাদের।
একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, শারীরিকভাবে না হলেও মানসিক ভাবে প্রতিনিয়ত আমরা অত্যাচার হচ্ছি ওই তিন ছাত্র নামক গুন্ডাদের হাতে। বলার মতো জায়গা নেই, সংশ্লিষ্টদের সাথে তাদের দহরম-মহরম। আস্থাহীন এক পরিবেশে লেখাপড়া করতে হচ্ছে আমাদের। তারা বিষয়টি নিয়ে তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছেন বলে জানিয়ে বলেন, তাদের পরিবারও উৎকন্ঠিত। হয়তো বড় কিছু ঘটলে, মনে হবে আমরা এই ক্যাম্পাসে কত অসহায় ছিলাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কয়েক মাস আগে দুজন শিক্ষিক-শিক্ষিকাকে ‘মিথ্যা অভিযোগের’ চাপে কলেজ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এ ঘটনায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী হতাশ। যে কলেজে শিক্ষকদের মর্যাদাক্ষুন্ন হয়, চাকুরি যায়, সেই কলেজে শিক্ষার্থীদের ভরসা কোথায়। এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা ভয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নামতে চান, কিন্তু এর পূর্ব পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরবো প্রতিকারের প্রত্যাশায়। । তারা আশা করছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ দ্রুত ক্যাম্পাসকে রাহুমুক্ত করবেন। নয়তো সচেতন সিলেটবাসীকে নিয়ে যাবতীয় তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করে প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হবো আমরা।
অভিযোগের বিষয়ে ইজাজ শাফিন চৌধুরী বলেন, তিনি কোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন, বরং যারা অভিযোগ তুলছেন তারা ‘ফ্যাসিস্ট দলের দোসর’—এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে তার নিজ আইডিতে জুলাই আন্দোলন কালে সরকার পতনে এক দফার দাবির বিরুদ্ধে পোস্ট করেছিলেন ”’ঘরে ঘরে খবর দে, এক দফার কবর দে” প্রসঙ্গে চুপ থাকেন তিনি। তার অপর দুই সহযোগী মিজানের সখ্যতা ছিল পলাতক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবের এছাড়া আসাদের ফ্যাসিস্ট কানেকশনের তথ্য রয়েছে মুখে।
এ প্রসঙ্গে নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ পরিমল চন্দ্র মল্লিক জানান, তিনি সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন এবং বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে অভিযোগ সত্য হলে, অবশ্যই তা খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে, শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট তথ্য বলছে, নতুন অধ্যক্ষের সাথে গুড কানেকশন গড়ে তুলছে ইজাজ। অধ্যক্ষকে বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসে সে। এমনকি অধ্যক্ষ পরিমল যখন কলেজে নতুন যোগদান করেন তখন ইজাজ তার অনুসারীদের নিয়ে তাকে ফুলেল সংবর্ধনা দেয়। সেকারণে ইজাজের দানবীয়তায় চোখ পড়ে না অধ্যক্ষের।

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।